জাতীয় গ্রিডের ইস্টার্ন (পূর্ব) অঞ্চলে অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনায় এখন পর্যন্ত (বুধবার বিকেল) মানবসৃষ্ট কোনো গাফিলতির প্রমাণ খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি।
গতকাল দুপুর ২টা ৪ মিনিটে জাতীয় গ্রিডের ইস্টার্ন অঞ্চলে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ) বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। এ ঘটনায় গতকালই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নির্বাহী পরিচালক (পিঅ্যান্ডডি) ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরীকে এ কমিটির প্রধান করা হয়।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরী বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে জানান, এ ঘটনায় তারা কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত মানব সৃষ্ট কোনো গাফিলতি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পিজিসিবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘মূল ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে, এটি জানার জন্য আমরা কাজ করছি। এগুলো সব মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটে। কোনটা আগে, কোনটা পরে আবার এটার কারণে ওটা হলো নাকি অন্য কারণে এটা হল, এগুলোই আমরা খুঁজছি। এগুলো বিভিন্ন যান্ত্রিক ডাটা। যন্ত্রের মধ্যে সময় থাকে। কী ঘটেছিল, সেটা থাকে, বিভিন্ন গ্রাফ- এগুলো এনালাইসিস করতে হবে।’
এ ঘটনায় কারো কোনো গাফিলতি দেখছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, না, হিউম্যান (মানুষের) গাফিলতি এখন পর্যন্ত আমাদের চোখে পড়েনি।’
ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘গতকাল রাতে আমরা (তদন্ত কমিটি) মিটিং করেছি। আজকে সকাল থেকে কাজ করছি। আমরা এখন ঘোড়াশাল পাওয়ার প্ল্যান্টে আছি। আশুগঞ্জ যাব, সিরাজগঞ্জে যাব। আমরা চেষ্টা করছি সমস্ত তথ্য সন্নিবেশিত করার পর বিশ্লেষণ করে কারণটা বের করতে। তদন্ত কমিটিতে আমরা বুয়েটের একজন প্রফেসরকেও যুক্ত করেছি। আমরা ৫ জন তদন্তে এসেছি। বুয়েটের প্রফেসরকে সকাল বেলায় জানাতে পেরেছি, সেজন্য উনি এখনো আসতে পারেননি।’
২ থেকে ৪ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ কারতে চান বলেও জানান কমিটির প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করবো দুই-তিন বা চারদিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে। বেশি জায়গায় যেতে হলে এবং বেশি তথ্য নিলে তখন হয়তো একটু এদিক-ওদিক হতে পারে, একটু বেশি সময় লাগতে পারে। আমরা বসবো। তথ্যগুলো এনালাইসিস করবো। আরও যদি কোথাও যেতে হয়, আমরা যাবো। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা কোনো একটি উপসংহারে আসার মতো তথ্য না পাই, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কাজ করতে হবে।’
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পর মঙ্গলবার ২টা ৩৬ মিনিটে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন চালুর মাধ্যমে ক্রমান্বয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহের কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হয়। রাত ৯টায় সিস্টেম জেনারেশন ৮ হাজার ৪৩১ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয় এবং সতর্কতার সঙ্গে সেটা বাড়িয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ করা হয়। পূর্বাঞ্চলের বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো (ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, মেঘনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট) চালু করে ধীরে ধীরে সিস্টেম স্বাভাবিক করা হয়। ঢাকায় ২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ১ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। রাতের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমেই সারাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু শুনেছি, বিদ্যুৎ সরবরাহের কোন একটি লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অন্য লাইন ওভারলোড হয়ে সেটা ট্রিপ করেছে। এর ফলে পূর্বাঞ্চলের গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বল্পতা দেখা দেয়। যার কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে।’
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে গ্রিড বিভ্রাটের কারণে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। গত আট বছরে ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও গ্রিড বিপর্যয় হয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দিলে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ দেশের বিশাল এলাকা ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল। তার ২৩ দিন পর মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৪ মিনিটে পুনরায় বিভ্রাটের ঘটনা ঘটলো।
এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গ্রাহকদের সাময়িক এই অসুবিধার জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন বলেন, আমরা সবসময় গ্রাহকদের পাশেই থাকব।