অনলাইনে রোহিঙ্গাবিরোধী ঘৃণাসূচক বক্তব্য (হেট স্পিচ) প্রচার করায় মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের ফেসবুকের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে ফেসবুকের প্রচারনীতির কঠোর সমালোচনা করে তাদের ওপর সরকারের নজরদারি বাড়ানোরও দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। খবর এএফপির।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে দেশটির সামরিক বাহিনী। সেসময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এর আগেও এসেছিল কয়েক লাখ। বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে।
ভুক্তভোগীদের সংগঠন ও অধিকারকর্মীদের বক্তব্য, ফেসবুকের অ্যালগরিদমের কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বেড়েছে। প্ল্যাটফর্মটি উগ্রপন্থি বিষয়বস্তু প্রচার করে, যা বিভ্রান্তি ও ঘৃণাসূচক বক্তব্যকে উৎসাহিত করে।
অ্যামনেস্টি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, অনেক রোহিঙ্গা ফেসবুকের ‘রিপোর্ট’ ফাংশনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাবিরোধী বিষয়বস্তু রিপোর্ট করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ফেসবুক এই ঘৃণ্য বিষয়বস্তুগুলো মিয়ানমারে অভূতপূর্ব শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানোর অনুমতি দিয়েছে।
প্রতিবেদনে ২০২১ সালের অক্টোবরে হুইসেল-ব্লোয়ারের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া ‘ফেসবুক পেপারস’র কথাও উল্লেখ রয়েছে। এতে দাবি করা হয়, ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে জাতিগত সংখ্যালঘুসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক বিষয়বস্তু ছড়ানো হচ্ছে, এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহীরা অবগত ছিলেন।
এ পর্যন্ত ফেসবুকের বিরুদ্ধে তিনটি আইনি অভিযোগ দায়ের করেছেন রোহিঙ্গারা। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর জোট ওইসিডি’তেও ফেসবুকের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন ভুক্তভোগীরা।
ফেসবুকের জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রে মামলাটি দায়ের হয়েছে গত ডিসেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে। এতে ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন শরণার্থীরা।
অ্যামনেস্টি বলেছে, আজ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ক্ষতিপূরণ দিতে মেটার (ফেসবুকের মূল কোম্পানি) অস্বীকৃতি কেবল এই ধারণাই যোগ করে যে, প্রতিষ্ঠানটি মানবাধিকারের ওপর এর প্রভাবের বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এ অবস্থায় ফেসবুককে তার প্ল্যাটফর্মে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এনজিও’টি। পাশাপাশি, জাতীয় কর্তৃপক্ষগুলোকে প্রতিষ্ঠানটির ওপর তদারকি বাড়ানোরও অনুরোধ জানানো হয়েছে।