ইরানের নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানি নারীদের ওপর নির্যাতন ও দমন-পীড়নের অভিযোগে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ইরানের এই পুলিশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজাব আইন লঙ্ঘনের অপরাধে পুলিশের হাতে আটক ২২ বছর বয়সী এক তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইরানে। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের বড় অংশজুড়ে রয়েছেন নারীরাই। আর এই বিক্ষোভের মধ্যেই ইরানের নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল ওয়াশিংটন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ইরানি নিরাপত্তা ও নৈতিক পুলিশের সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নারী, নাগরিক সমাজ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের অধিকার লংঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মূলত ইরানের নৈতিক পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ রোস্তামি চেশমেহ গাচি এবং তেহরানে এই বাহিনীর পরিচালক হাজ আহমেদ মিরজেইকে লক্ষ্য করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ২২ বছর বয়সী ইরানি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদের পর মিরজেইকে অবশ্য সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
২২ বছর বয়সী আমিনিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার আগে তিন রাত ধরে তিনি তেহরানের একটি নৈতিক আটক কেন্দ্রে বন্দি ছিলেন এবং মাথায় হিজাব না পরার জন্য তার ওপর নিপীড়ন চালানো হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আরও যেসব ইরানি রয়েছেন তারা হচ্ছেন- ইরানের গোয়েন্দা বিভাগের মন্ত্রী ঈসমাইল খতিব, বাসিজ বাহিনীর উপ-অধিনায়ক সালার আবনুশ, আইন প্রয়োগ বাহিনীর উপ-অধিনায়ক কাসেম রেজাই, ওই বাহিনীর প্রাদেশিক বাহিনী মানুশের আমানুল্লাহি এবং ইরানি সেনার স্থলবাহিনীর কমান্ডার কিউমার্স হেইদারি।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই কর্মকর্তারা এমন সব সংগঠনের তদরকি করে যারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের এবং ইরানের সুশীল সমাজের সদস্যদের, রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের এবং ইরানের বাহা’ই সম্প্রদায়ের লোকজনকে দমন করতে নিয়মিত সহিংসতা চালিয়ে থাকে।’
এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে এই সকল ইরানি কর্মকর্তাদের সকল ধন-সম্পদ আটক করা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বিদেশে তাদের সঙ্গে আর্থিক লেনেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
ট্রেজারি বিভাগের ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই নিষেধাজ্ঞার চূড়ান্ত লক্ষ্য শাস্তি দেওয়া নয়, বরং তাদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা’।
এছাড়া আরও কয়েক ডজন ইরানি কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন, পরমাণু অস্ত্র ও মানবাধিকার লংঘন বিষয়ক নানা অভিযোগ রয়েছে।
ইরানের নৈতিকতা পুলিশ যখন মাশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে তখন তিনি তেহরানে তার ভাইয়ের সাথে ছিলেন। হিজাব ও বোরকা না পরে বাড়ির বাইরে বের হওয়ায় অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে একটি ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি পড়ে যান ও কোমায় চলে যান।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ বলেছেন, পুলিশ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে এবং তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে একটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে মাথায় আঘাত করে।
তবে পুলিশ দাবি করছে এই তরুণীকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। বরং হঠাৎ হার্ট ফেইল করে তার। কিন্তু আমিনির পরিবার বলছে, তিনি একেবারে সুস্থ ছিলেন।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানের অন্তত ৫০টি শহরে বিক্ষোভ চলছে। এর আগে ২০১৯ সালে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল ইরানে। রয়টার্সের তথ্যমতে, তারপর এত বড় বিক্ষোভ দেশটিতে আর হয়নি।