গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একেবারে কেন্দ্র কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা সবাইকে হতবাক করে দিয়েছিল। নিরাপত্তা ব্যুহে গড়া এই ক্যাপিটল ভবনে কীভাবে এত বড় হামলার ঘটনা ঘটতে পারে তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছিল। নতুন করে সেই চিন্তা কেবল সাধারণ মার্কিনিদের মধ্যে নয়, আইন-প্রণেতাদের মধ্যেও চলে এসেছে কীভাবে রক্ষা করা যায় ক্যাপিটল হিলের নিরাপত্তা। গত শুক্রবার এক ব্যক্তির হামলায় প্রাণ দিতে হয়েছে ক্যাপিটল হিলের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে। তবে হামলাকারীও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলের রক্তাক্ত দাঙ্গার তিন মাসের কম সময়ের ব্যবধানে আবারও এই হামলার চেষ্টা হলো। তবে এ হামলার সঙ্গে সন্ত্রাসী তৎপরতার সম্পৃক্ততা নেই বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ। স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ক্যাপিটল হিলের পুলিশের অ্যালার্ট সিস্টেম থেকে একটি মেইল আসে। যেখানে বলা হয়, ক্যাপিটল হিলের ভেতরে বাইরে যারা রয়েছে তারা যেন কোনও কিছুর আড়ালে অবস্থান করে নিজেদের রক্ষা করেন।
সবাইকে জানালা বা দরজার কাছ থেকে সরে যেতে বলা হয়। পুলিশ জানিয়েছিল, এ সময় সন্দেহভাজন ঐ ব্যক্তি একটি নীল রঙের সেডান গাড়ি নিয়ে ক্যাপিটল উত্তর দিকের ব্যারিকেডের ওপর আছড়ে পড়ে। তারপর চালক গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ছুরি দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় এক পুলিশ সদস্য আগ্নেয়াস্ত্র বের করে তাকে গুলি করে। হামলাকারী নিহত হওয়ার আগেই তার ছুরিকাঘাতে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন যাদের মধ্যে উইলিয়াম বিলি ইভান্স নামের এক কর্মকর্তা মারা যান। পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ঐ হামলাকারী একাই ছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই সহিংস হামলার কথা জেনে তার হৃদয় ভেঙে গেছে। তিনি পুলিশ অফিসারের মৃত্যুতে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ডেমোক্রেটিক হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, আমেরিকানদের হৃদয় ভেঙে গেছে। নিহত ইভান্সকে ‘গণতন্ত্রের শহিদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। রিপাবলিকান সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা মিচ ম্যাককনেল লিখেছেন, তিনি প্রার্থনা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন-প্রণেতারা মনে করেন, আমেরিকান গণতন্ত্রের আসনগুলো সব জনগণের জন্য খোলা থাকবে। যদিও সেখানে নিরাপত্তার হুমকি সবসময়ই থাকে। এই চিন্তা থেকেই ক্যাপিটল হিল থেকে জনগণকে দূরে রাখা বেড়া সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আইনপ্রণেতারা আশা করেছিলেন, ক্যাপিটল হিলের নিরাপত্তা আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। এজন্য স্টিলের বেড়া প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা মনে করছেন, বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গেই এখনই চিন্তা করা উচিত।
প্রতিনিধি পরিষদ ও ক্যাপিটলের ব্যয় ও নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান টিম রায়ান বলছেন— এই হামলা আমাদের চোখের পানি ফেলতে সফল হয়েছে। বেড়া না থাকলেও এখন সেখানে কেউ যেতে নিরাপদ বোধ করবেন না। প্রশ্ন উঠেছে, এখানকার পরিবেশ কী যথেষ্ট নিরাপদ আছে? কেবল বেড়াই কী এমন ধরনের নৃশংস হামলা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে? রায়ান জানিয়েছেন, এখনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড় ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কেবল বেড়া নয়, এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারী, অবকাঠামো এবং ক্যাপিটল পুলিশের গোয়েন্দা সক্ষমতা নিয়েও ভাবা হচ্ছে। মার্কিন সরকারকে এটা ভাবিয়ে তুলছে যে, দেশের জনগণের সবচেয়ে বড় ভবনটি এখন টার্গেটে পরিণত হয়েছে। ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জেনিফার ওয়েক্সটন মনে করেন, ক্যাপিটল ভবন আবার পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া উচিত।