করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে ঢাকার নিম্ন আয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত লেখাপড়ায় দেখা দেয় শিখন ঘাটতি। দীর্ঘদিন শ্রেণীভিত্তিক পড়াশোনায় অনিয়মিত থাকায় স্কুল খোলার পর নতুন শ্রেণিতে পুরোপুরি সক্রিয়ভাবে পড়াশোনায় সাড়া প্রদানে বেগ পাচ্ছে অনেক শিশু।
বিগত বছরের এই শিখন ঘাটতি কমিয়ে এনে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাসের মূলধারায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিতের উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছে ‘ফ্লেক্সিবল লার্নিং প্যাকেজ’। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সহায়তায় এ প্রশিক্ষণ রিসোর্স মডিউলটি তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং বাস্তবায়নকারী পার্টনার সংস্থা সুরভি।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্যাকেজটি উদ্বোধন করেন মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, করোনা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের মাধ্যমে আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অনেকটা সক্ষম হই। তবে সরাসরি ক্লাসের বিকল্প অনলাইন ক্লাস নয়। সরাসরি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের শিখন অনেক বেশি কার্যকর হয়। দীর্ঘদিন বিরতি থাকার ফলে কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই শিখন ঘাটতি পূরণে কাজ করে চলেছে। আর তাই এই ফ্লেক্সিবল লার্নিং প্যাকেজের পরিধি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, শিখন ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি ‘জেন্ডার ইকুইটি মুভমেন্ট ইন স্কুলস (জেমস) কার্যক্রমকে আরও ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন, যাতে করে সমাজে জেন্ডার সমতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিত হয়।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন সৃষ্ট শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি পূরণে শিক্ষকরাই প্রধান নিয়ামক শক্তি হিসাবে কাজ করবেন। শিক্ষকরা ফ্লেক্সিবল লার্নিং প্যাকেজটি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির নির্দেশিকা যথাযথভাবে অনুসরণ করে পাঠদান করলে এ ঘাটতি পূরণ সম্ভব।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক (কর্মসূচি উন্নয়ন ও শিক্ষা) জলিনূর হক বলেন, চাইল্ড ব্রাইড টু বুকওয়ার্ম প্রকল্পটি ঢাকার নিম্ন আয়ের এলাকার ২২টি স্কুলে কাজ করছে আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া, শিশুবিবাহ ও শিশুশ্রম প্রতিরোধে। আমাদের কর্ম এলাকার ২২টি স্কুলে এ ফ্লেক্সিবল লার্নিং প্যাকেজটি ব্যবহার করে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পূর্ব পাঠের জ্ঞান পরীক্ষা করতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী পাঠ পরিচালনা করতে পারবেন। যদি পূর্বপাঠে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় তবে তা পুনরায় পাঠদানের মাধ্যমে তাদের সেই ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাউশি পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী ও মাউশি পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মাউশি পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ড. একিউএম শফিউল আজম, সুরভির নির্বাহী পরিচালক মো. আবু তাহের, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার বিষয়ক থিমেটিক লিড ড. ফেরদৌসি বেগম এবং এডুকেশন স্পেশালিস্ট ফারজানা বারী।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ‘চাইল্ড ব্রাইড টু বুকওয়ার্ম’ প্রকল্পের আওতায় এই মডিউলটি ঢাকার ২২টি মাধ্যমিক স্কুলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে ব্যবহার করা হবে। প্যাকেজটিতে মোট তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি ও গণিত।
এই রিসোর্স প্যাকেজের ওপর ভিত্তি করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নির্বাচিত ২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোট ২৫৭ জন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে একটি রিসোর্স পুল তৈরির চেষ্টা করছে। সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে মডিউলটি চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য মাউশিতে পাঠানো হবে।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্লেক্সিবল লার্নিং প্যাকেজটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করার পর তা দূর করতে সহায়তা করবে। সেই সাথে শিক্ষার্থী যে যেই শ্রেণিতে বর্তমানে অধ্যয়ন করছে সে শ্রেণির সমমানের লেভেলে তাকে নিয়ে যাওয়া যায়। এই প্যাকেজের অনুশীলনগুলো যথাযথভাবে শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী দ্রুততার শ্রেণিতে অধ্যয়নের উপযোগী দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। ফলে শিখন ঘাটতি দূর করে নিজ শ্রেণির জন্য নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত হতে পারবে।