প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার মজুত করে কয়েকটি ব্যাংক হাতিয়ে নিয়েছে বড় অঙ্কের মুনাফা। কোনো কোনো ব্যাংক ডলার বিক্রিতে ৭৭০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে। এমন তালিকায় থাকা আরও ছয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকগুলো হলো- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), এনসিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া এবং বিদেশি বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে এসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, ডলার নিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার অভিযোগে আরও ছয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেগুলো হলো ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। তারও আগে এসব ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আমদানি বেড়ে যাওয়া ও প্রবাসী আয় কমার কারণে দেশে মার্কিন ডলারের চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে দাম। অপরদিকে ডলারের বিপরীতে পতন হচ্ছে টাকার মান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে ৯৫ টাকা দরে। গত আগস্টে যা ছিল ৮৫ টাকা।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা ডলারের মূল্য ঘোষণা দিলেও আমদানি পর্যায়ে নিচ্ছে ১০১ থেকে ১০৬ টাকা করে। আর নগদ ডলার বিক্রি করছে ১০৬ থেকে ১০৮ টাকায়। আর খোলা বাজারে ১০৮ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে। গত ১০ ও ১১ আগস্ট খোলা বাজারে নগদ ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ঠিক রাখতে গিয়ে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বুধবারও (৭ সেপ্টেম্বর) বিক্রি করা হয়েছে ৫ কোটি ডলার। এতে রিজার্ভ কমে হয়েছে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি ডলার।
এদিকে, ডলারের বাজারে করণীয় নির্ধারণে বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা এ সভায় অংশ নেবেন।
ডলার লেনদেনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো যে মুনাফা করেছে তার তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রাইম ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাসে ৫০৪ শতাংশ বা ১২৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। একই সময়ে এনসিসি ব্যাংক ৫০০ শতাংশ বা ১০০ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৪১৭ শতাংশ বা ৭৫ কোটি টাকা, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৪০৩ শতাংশ বা ১১৭ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংক ৩৫৩ শতাংশ বা ১০৬ কোটি টাকা, সিটি ব্যাংক ৩৪০ শতাংশ বা ১৩৬ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২৪৫ শতাংশ বা ১২০ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ২৩৪ শতাংশ বা ৯৭ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০৫ শতাংশ বা ১৩৫ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক ১৫৯ শতাংশ বা ৪৩ কোটি টাকা এবং ইসলামী ব্যাংক ১৪০ শতাংশ বা ১৩৬ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে।