আফগান ক্রিকেটের রূপকথার গল্প যেন শেষ হওয়ার নয়। এশিয়া কাপের এবারের আসরে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে নাকাল করা মোহাম্মদ নাবির দল এবার হারিয়ে দিলো বাংলাদেশকেও।
শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল আফগানিস্তান। এবারের জয়টিও এসেছে হেসেখেলে। বাংলাদেশকে আফগানরা হারিয়েছে ৭ উইকেট আর ৯ বল হাতে রেখে। এতে সবার আগে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে নাম লিখিয়েছে দলটি।
জয়ের লক্ষ্য ছিল মাত্র ১২৮ রানের। বাংলাদেশের বোলারদের তাই দারুণ কিছুই করতে হতো। প্রথম ১৫ ওভার অবশ্য আফগানদের ভালোই চাপে রেখেছিলেন সাকিব-মোসাদ্দেক-সাইফউদ্দিনরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেনি টাইগাররা।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেটে মাত্র ২৯ রান তুলতে পারে আফগানিস্তান। পঞ্চম ওভারে সাকিব আউট করেন আগের ম্যাচে লঙ্কানদের বিপক্ষে ঝড় তোলা রহমানুল্লাহ গুরবাজকে।
সাকিবকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন গুরবাজ (১৮ বলে ১১)। মুশফিক স্টাম্প ভেঙে দিতে একটুও দেরি করেননি। আফগানিস্তান প্রথম উইকেট হারায় দলীয় ১৫ রানে।
এরপর উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন হযরতউল্লাহ জাজাই। ইব্রাহিম জাদরানের সঙ্গে ৩১ বলে ৩০ রানের জুটি গড়েন এই ওপেনার। অবশেষে ইনিংসের দশম ওভারে তাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মোসাদ্দেক। জাজাইয়ের ব্যাট থেকে আসে ২৬ বলে ২৩।
৪৫ রানে ২ উইকেট হারানোর পর আগেভাগেই নেমে পড়েন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নাবি। তবে সুবিধা করতে পারেননি। ১৩তম ওভারে বল হাতে নিয়েই সাইফউদ্দিন এলবিডব্লিউ করেন তাকে (৯ বলে ৮)।
১৫ ওভার শেষে আফগানিস্তানের রান ছিল ৩ উইকেটে মাত্র ৭৬। তখন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা বাংলাদেশের পক্ষে। কিন্তু শেষ ৫ ওভারেই সব গড়বড় হয়ে যায়।
৩৩ বলে ৬৯ রানের ম্যাচ জেতানো এক জুটি গড়েন দুই জাদরান-নাজিবুল্লাহ আর ইব্রাহিমের। নাজিবুল্লাহ ১৭ বলেই খেলেন ৪৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। যে ইনিংসে ১টি চারের সঙ্গে ছক্কা হাঁকান ৬টি। ৪১ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন ইব্রাহিম জাদরান।
এর আগে ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বড় বিপর্যয়ে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ৭ উইকেটে ১২৭ রানের সম্মানজনক পুঁজি তুলতে পারে টাইগাররা।
বাংলাদেশ এই পুঁজি পায় মোসাদ্দেক হোসেনের ঝড়ো ব্যাটে চড়ে। ৩১ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন এই অলরাউন্ডার। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ ২৭ বলে গুরুত্বপূর্ণ ২৫ আর শেষদিকে শেখ মেহেদি ১২ বলে ২ চারের সাহায্যে করেন ১৪ রান।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচে টসভাগ্য সহায় ছিল টাইগারদের। প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন শেষ সময়ে দলে যুক্ত হওয়া নাইম শেখ।
আফগান পেস আক্রমণের সেরা অস্ত্র ফজলহক ফারুকিই প্রথম ওভার করেন। দেখেশুনে খেলে ওই ওভার থেকে একটি বাউন্ডারিসহ ৫ রান তুলে নেন নাইম শেখ। তবে এরপর আর সুবিধা করতে পারেননি।
দ্বিতীয় ওভারে অফস্পিনার মুজিব উর রহমানকে আনেন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নাবি। প্রথম ওভারেই সাফল্য মুজিবের। নাইম শেখকে পরিষ্কার বোল্ড করে দেন তিনি। ৮ বলে ৬ করে সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি ওপেনার।
ওয়ানডেতে যতই আত্মবিশ্বাসী মনে হোক, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেন এনামুল হক বিজয় একদমই মানিয়ে নিতে পারছেন না। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা এই ওপেনার নিয়মিতই ব্যর্থ হচ্ছেন টি-টোয়েন্টিতে।
এশিয়া কাপেও এর ব্যত্যয় হলো না। ১৪ বলে মাত্র ৫ রান করে ফিরলেন সাজঘরে। মুজিব উর রহমানের ঘূর্ণিতে ক্রস খেলতে গিয়ে লাইন পুরোপুরি মিস করেন বিজয়। আম্পায়ার অবশ্য প্রথমে আবেদনে সাড়া দেননি। তবে রিপ্লেতে দেখা যায়, বল তার লেগস্টাম্প পেয়ে গেছে।
নাইম শেখ, এনামুল হক বিজয়ের পর অপরিণামদর্শী শট খেলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক সাকিবও (৯ বলে ১১)। তিনটি উইকেটই নেন আফগান অফস্পিনার মুজিব উর রহমান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেটে মাত্র ২৮ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ।
সেখানেই থামেনি উইকেট পতনের মিছিল। পাওয়ার প্লের পরের ওভারে রশিদ খান বল হাতে নিয়ে যোগ দেন উইকেট শিকারের উৎসবে। এবার এলবিডব্লিউ মুশফিকুর রহিম (১)। আম্পায়ার শুরুতে নটআউট দিলে রিভিউ নিয়ে জেতে আফগানিস্তান।
২৮ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে এরপর টেনে তোলার দায়িত্ব নেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর তরুণ আফিফ হোসেন। পঞ্চম উইকেটে তারা দেখেশুনে খেলে যোগ করেন ২৫ বলে ২৫ রান।
একাদশতম ওভারে এসে এই জুটিটি ভাঙেন রশিদ খান। আফগান লেগস্পিনারের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন আফিফ (১৫ বলে ১২)। ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারায় টাইগাররা।
তবে উইকেটে এসে ধরে খেলার চেষ্টা না করে মারমুখী হন মোসাদ্দেক হোসেন। নিজের মোকাবেলা করা তৃতীয় বলেই মোহাম্মদ নাবিকে ছক্কা হাঁকান এই অলরাউন্ডার। যদিও এই বলটি ক্যাচ হয়েছিল, আম্পায়ার সফট সিগন্যাল আউটও দিয়ে রাখেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, ক্যাচ নিয়ে বাউন্ডারিতে পা দিয়েছেন আফগান ফিল্ডার ওমরজাই।
দলের চরম বিপদের মুখে দুটি জুটি গড়েছেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথমে আফিফ হোসেনকে নিয়ে ২৫ বলে ২৫, পরে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে ৩১ বলে ৩৬ রান যোগ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
অবশেষে ইনিংসের ১৬তম ওভারে রশিদ খানকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ইব্রাহিম জাদরানের দারুণ ডাইভিং ক্যাচ হন তিনি। ২৭ বলে ১ বাউন্ডারিতে মাহমুদউল্লাহ করেন ২৫ রান।
মোসাদ্দেক উইকেটে আসার পর ঠিক টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংটাই করেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ফিফটিটা পাননি এবং সেটা নিজের ভুলেই। আফগান মিডিয়াম পেসার ওমরজাইয়ের করা শেষ ওভারে তিন বল খেলে মাত্র ২ রান নিতে পারেন মোসাদ্দেক।
আফগানিস্তানের বোলারদের মধ্যে ৩টি করে উইকেট নেন মুজিব উর রহমান আর রশিদ খান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৭/৭ (মোসাদ্দেক ৪৮*, মাহমুদউল্লাহ ২৫, মেহেদি ১৪, আফিফ ১২, সাকিব ১১; মুজিব ৩/১৬, রশিদ ৩/২২)
আফগানিস্তান: ১৮.৩ ওভারে ১৩১/৩ (নাজিবুল্লাহ ৪৩*, ইব্রাহিম ৪২*, জাজাই ২৩; সাকিব ১/১৩, মোসাদ্দেক ১/১২, সাইফউদ্দিন ১/২৭)
ফল: আফগানিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মুজিব উর রহমান (আফগানিস্তান)