বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের উদাসীনতা, ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে করোনা সংক্রমণের হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
শুক্রবার (২ এপ্রিল) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে দুই দিনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলা চলেছে। এ হামলায় ২০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যা জাতির জাতির ইতিহাসে কলঙ্কজনক এক অধ্যায় রচনা করেছে। আর এতে প্রমাণিত হয়েছে, এই অনির্বাচিত সরকার তাদের বেআইনি ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রের সব মূল্যবোধকে ধ্বংস করে একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার হীন চক্রান্ত করছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে মিথ্যা প্রচারণা, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের পথ বেছে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের লক্ষ্যই হচ্ছে বাকশালের ন্যায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। মিথ্যা মামলা জনমতকে দমন করার বড় যন্ত্র। রাষ্ট্রের সব জায়গায় প্রভাব বিস্তার করে ইতোমধ্যে তারা দেশকে একটি স্বৈরাচারী কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই ফ্যাসিস্ট সরকারের হত্যা, গুম, খুন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। বিনা বিচারে হত্যা, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ভিন্নমত দমন, সাংবাদিকদের হত্যাসহ নির্যাতনের ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সব গণতান্ত্রিক দেশের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল জাজিরাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্প্রতি বর্তমান বেআইনি সরকারের চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এটা এখন প্রমাণিত যে, বেআইনি আওয়ামী লীগ সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখতে অতীতের মতই বিরোধীদলের ওপর দমন-নিপীড়ন ও হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা সেই জঘন্য কর্মেরই ধারাবাহিকতা। অ্যাডভোকেট নিপুন রায়ের গ্রেফতার ও নির্যাতনের ঘটনাও এরই অংশ। অবিলম্বে নিপুন রায়সহ দলের সব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশ আজ চরম রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হওয়ার পরও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনের প্রক্রিয়াকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ ও অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হচ্ছে। দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করেছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কোভিড মহামারি মোকাবিলায় সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এই বেআইনি সরকার দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে। এ অবস্থায় সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতি, দুঃশাসন ও গণতন্ত্র হত্যার দায় নিয়ে সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। দানবীয় কর্তৃত্ববাদী দখলদার বেআইনি সরকারকে জনগণের সংসদ এবং সরকার গঠন করতে দেশের সব গণতান্ত্রিক দলসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।’