পাবনার সাঁথিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দলীয় কোন্দলের জের ধরে আলহাজ (৩৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্ক ও সম্মানের ভয়ে মালামাল নিয়ে নারী-পুরুষ গ্রাম ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার গৌরিগ্রাম ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে শরবেশ মোল্লা ও মোসলেম মাস্টার গ্রুপের বিরোধের জের ধরে খুন হয় আলহাজ (৩৫) নামে এক যুবক। এ ঘটনায় রাতে ১০ জন আটক করে পুলিশ। পরে শুক্রবার বিকেলে তাদের পাবনা জেলহাজতে পাঠানো হয়।
শুক্রবার (২ এপ্রিল) বাদ আসর আলহাজের জানাযা নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। রাতে তার বাবা মানিক বাদী হয়ে মোসলেম মাস্টারকে প্রধান আসামি করে ৩২ জনের নামে সাঁথিয়া থানায় মামলা করেন।
এদিকে ঘটনার পর প্রতিপক্ষের অর্ধশত পরিবারের প্রায় দেড়শ পুরুষ সদস্য বাড়িছাড়া রয়েছেন। ঘর-বাড়িছাড়া কিছু পরিবারে গরু, মহিষ ও দামি আসবাবপত্র পুলিশের সহায়তায় আত্মীয়দের বাড়িতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের কড়া নিরাপত্তার পরও ঘুঘুদহ গ্রামের সলেমান, পিন্টু, কদ্দুস ও আতিকের বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
পিন্টুর বাড়ি থেকে লুট হওয়া দুটি গরু উপজেলার বিষ্ণুপুর থেকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে ফেরত নেন বলে জানান পিন্টুর আত্মীয় মানিক মোল্লা। পিন্টুর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়ির আসবাবপত্র, বিছানাসহ সমস্ত জিনিসপত্র এলোমেলো রয়েছে।
কদ্দুসের স্ত্রী ফুলমতি ও আতিকের স্ত্রী কলি জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আমাদের মহিষ, গরু, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, পেঁয়াজ, স্বর্ণালংকারসহ আসবাবপত্র লুট করে নেয় প্রতিপক্ষের লোকজন। এখন আমরা সম্মানের ভয়ে অন্যত্র পালানোর চেষ্টা করছি। রাত হলে প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের ওপর আক্রমণ করতে পারে।
ঘুঘুদহ গ্রামের সোলেমানের স্ত্রী বুলবুলি খাতুন বলেন, ঘটনার দিন আমার স্বামী সাঁথিয়ার হাটে ছিল। সে এর কিছুই জানে না। বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিপক্ষের লোকজন লাঠি ফালা নিয়ে হামলা চালিয়ে গরু, মহিষ নিয়ে গেছে। তারা আমার বসতঘরের তালা ভেঙে ফ্রিজ, টিভি, স্বর্ণালংকারসহ নগদ অর্থ নিয়ে যায়। আমি সম্মান ও প্রাণের ভয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছি।
রঘুরামপুর গ্রামের আবেদা খাতুন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আমার মেয়ের জামাই বাড়িতে না থাকায় ওরা আমার মেয়ের গরু নিয়ে চলে গেছে। এদিকে লুটের ভয়ে মালামাল নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন এলাকার নারী সদস্যরা। রাহাদুলের স্ত্রী রাশিদা খাতুন ও সাইদুলের স্ত্রী লাকী খাতুন বাড়ির আসবাবপত্র ভ্যানে করে সরিয়ে নিচ্ছেন। তারা এ প্রতিনিধিকে জানান, রাতে লুটপাট হবে বলে আমরা জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছি।
নিহত আলহাজ্বের নানা ৯ নম্বর ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি শরবেশ মোল্লা লুটপাটের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, তারা নিজেদের জিনিসপত্র নিজেরাই অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করছে।
সাঁথিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ঘুঘুদহ গ্রামটি অনেক বড় এবং বিলবেষ্টিত এলাকা। আমরা ২৫টি গরু উদ্ধার করে আত্মীয় স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। পুলিশের কঠোর অবস্থানের পরও যদি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে তার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এই ঘটনায় এখনো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।