আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনের ওপর সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছে, কারচুপি করতেই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করতে চাইছে ক্ষমতাসীনরা।
দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করছে— উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, ১৯৯০ সালের পর থেকে বারবার সংবিধান কাটাকাটি করে এক ব্যক্তির শাসন কায়েম করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এখন সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে। কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এ কথা বলাই যায়।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারলেও দলীয় সরকারের অধীনে তা সম্ভব হয়নি— উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রার্থীদের সঙ্গে অন্য প্রার্থীদের নির্বাচনে হলে কখনোই লেভেল প্লেইং ফিল্ড হয় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতিতে দেশ ভেসে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী, আমলা আর রাজনীতিবীদদের একটি চক্র ব্যবসার নামে দেশে লুণ্ঠন করছে। রাজনীতির অবস্থা এমন হয়েছে যে নির্বাচনে যারা পরাজিত হবে, তারা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দেশের মানুষ এমন রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে চায় না।
এসময় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, এমন বাংলাদেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। দেশে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা নেই। গণভবনের একজন কর্মচারীর যে সম্মান আছে, তা এখন মন্ত্রী ও এমপিদেরও নেই। সরকারি কর্মচারীরা এখন লাগামহীন। মানুষের সম্মান ও মর্যাদার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। এভাবে দেশ চলতে পারে না।
তিনি বলেন, মানুষের মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের জন্যই এখন কট্টর বিএনপি ও কট্টর আওয়ামী লীগ থেকে সম-দূরত্ব বজায় রেখে সব রাজনৈতিক শক্তিকে একই মোহনায় হাজির করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যৌবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেমে পড়েছি, পরে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেও ভালোবেসেছি। দেশ ও মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধু ও পল্লীবন্ধুর ভালোবাসা ছিল সবকিছুর ঊর্ধ্বে। বঙ্গবন্ধু ও পল্লীবন্ধুর ওপর সাধারণ মানুষের এখনো গভীর অনুরাগ আছে, এটি কাজে লাগিয়ে আমরা মানুষের সব অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।
এরশাদ একজন সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন— দাবি করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, পরে রাজনৈতিকদল জাতীয় পার্টি গঠন করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করার পরও রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী অবস্থান দেখিয়েছে। আবার জেলে থেকেই দুটি নির্বাচনে পাঁচটি করে আসনে জয় লাভ করে পল্লীবন্ধু ইতিহাস রচনা করেছেন। মৃত এরশাদ জীবিত এরশাদের চেয়েও বেশি শক্তিশালী।
এসময় জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার।