আগামী ২৮ আগস্ট চালু হচ্ছে দেশের প্রথম সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীনে এ হাসপাতালটি ৭৫০ শয্যার। নির্মাণব্যয় ১৩শ কোটি টাকা। বিশেষায়িত এ হাসপাতালে থাকবে আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ নানান সুবিধা। আর খরচও থাকবে সাধারণের নাগালে।
সব ঠিক থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৩ তলাবিশিষ্ট হাসপাতালটির রয়েছে দ্বিতল বেজমেন্ট। ৭৫০ শয্যার হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে থাকবে ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ১০০ শয্যার আইসিইউ। জরুরি বিভাগে থাকবে ১০০ শয্যা, ভিভিআইপি কেবিন ছয়টি, ভিআইপি কেবিন ২২টি এবং ডিল্যাক্স শয্যা থাকবে ২৫টি। সেন্টারভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকবে আটটি করে শয্যা। হাসপাতালটিতে থাকবে এক্স-রে, এমআরআই, সিটি-স্ক্যানসহ অত্যাধুনিক সব ডায়াগনস্টিক সুবিধা।
বিশেষায়িত এ হাসপাতালে কমমূল্যে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে জানিয়ে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালটিতে উন্নতমানের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও এখানে প্যাথলজি, রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি বিএসএমএমইউ হাসপাতালের মতোই রাখা হবে। এক্ষেত্রে খরচ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই। তবে এখানে ভর্তি রোগীদের শয্যায় কিছুটা খরচ বাড়তে পারে। তাও খুব বেশি নয়। আমরা স্বল্পমূল্যেই উন্নত সব সেবা এখানে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তখন থেকেই তার স্বপ্ন ছিল বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে কোটি কোটি টাকা যাতে খরচ না হয়। বিশ্বমানের চিকিৎসা যেন বাংলাদেশেই দেওয়া যায়। চিকিৎসার জন্য আর যেন বিদেশে না যেতে হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ মোট ৩শ চিকিৎসক ও ১২শ স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করার কথা রয়েছে। বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালটিতে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৮০ জন চিকিৎসকসহ মোট ১৪০ জন নার্স ও কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে ২২ জন চিকিৎসকসহ ৪৬ জন কোরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছেন। আরও একটি দল প্রশিক্ষণ নিতে যাবে।
ছয়টি বিশেষায়িত সেন্টারের মাধ্যমে চলা এই হাসপাতালে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি দুই বছরের জন্য ৫৬ জন কোরীয় কনসালট্যান্ট কাজ করবেন। যারা দেশীয় জনবল আরও দক্ষ করতে ভূমিকা রাখবেন।
এছাড়া হাসপাতালটিতে প্রথম পর্যায়ে থাকবে অটিজম সেন্টার, ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাস্কুলার সেন্টার এবং কিডনি সেন্টার।
দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকবে রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার, অপথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, ডার্মাটোলজি সেন্টার এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার।
এখানে বিশ্বমানের চিকিৎসা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, রোবোটিক অপারেশন, জিন থেরাপির ব্যবস্থাও থাকবে।
এছাড়া হাসপাতালে সুন্দর পরিবেশের জন্য থাকবে সানকেন গার্ডেন, রুফটপ গার্ডেন ও বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব সুযোগ-সুবিধা। থাকবে উন্নতমানের আধুনিক ব্যবস্থাপনার বহির্বিভাগ, ইনফো ডেস্ক এবং ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার।
হাসপাতালটি নির্মাণে এক হাজার ৩শ কোটি টাকার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া দিয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। এ ঋণ ৪০ বছর মেয়াদি। তবে প্রথম ১৫ বছর কোনো টাকা পরিশোধ করতে হবে না। তারপর থেকে ০ দশমিক ১ শতাংশ সুদে এই ঋণ শোধ করতে হবে।