কাস্তে, নিড়ানি, মাথাইল, কোদাল ও বাঁশের ঝাঁকাসহ নানা রকমের যন্ত্রহাতে দাঁড়িয়ে আছেন এক শ্রমজীবি মানুষ। তাদের শ্রম বিক্রি করতে। কেওবা শ্রমিক কিনতে ব্যস্ত দরদামে। সপ্তাহের প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার শ্রমিক বিক্রির এমনি এক আজব হাট বসে রাজবাড়ীর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন ট্যম্পু স্ট্যান্ডে। চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। নির্ধারিত এ দুদিন ছাড়াও বিক্রি না হওয়া শ্রমিকগুলো প্রায় প্রত্যেকদিনই বসে এ হাটে। কাজের মান ভেদে ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হন তারা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েকশ দরিদ্র দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষ জীবিকার তাগিদে ছুটে আসেন রাজবাড়ীর শ্রম বিক্রির এই হাটে। এই হাটে শ্রম বিক্রি করা বেশির ভাগ শ্রমিক পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ ও চাপাইনবাগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার।
তারা শ্রম ক্রয় করতে আসা মালিকদের সঙ্গে দরদাম চুক্তি করে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ফসলি মাঠে ধান বোনা, পাটকাটা, পাট ধোঁয়াসহ গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। কাজ করেন একটানা এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত।
শ্রমিক কিনতে যাওয়া বালিয়াকান্দি উপজেলার নওয়াব আলী বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলে শ্রমিক সংকট তাই এখানে এসেছি। পাট কাটা ও ধোঁয়ার জন্য ৬ জন শ্রমিক নিয়েছি দিন হাজিরা ৭০০ টাকা, থাকা ও খাওয়াসহ।’
শ্রমিক কিনতে যাওয়া রাজবাড়ী সদর উপজেলার কোলার হাট এলাকার কুবাদ শেখ বলেন, ‘আমার জমি চাষ করা ও বাড়ির কাজের জন্য ৪ জন শ্রমিক লাগবে। ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে হলে ভাল হয় কিন্তু তারা চাইতেছে ৭০০-৮০০ টাকা করে।’
শ্রমিক নওগাঁর মাসুদ রানা (৫৫) বলেন, ‘কৃষি কাজই আমাদের আয়ের একমাত্র মাধ্যম। এই সময়টাতে আমাদের ওখানে কোন কাজ থাকে না তাই এখানে এসেছি। কয়েকজনের সাথে দরকষাকষি চলছে। দেখি কি হয়।’
চাঁদপুরের মো. হাসান (৩৫) বলেন, ‘গতকাল এসেছি, রাতে স্টেশনেই ছিলাম। আমাদের এলাকায় কাজ নেই। ছয় সদস্যের পরিবারে আমিই একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। এ অঞ্চলে শ্রমের দাম বেশি, কাজও বেশি তাছাড়া প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করা যায়। তাই এখানে এসেছি।’
মানিকগঞ্জের শ্রমিক শরিফুল ইসলাম (৪০) বলেন, ‘এ জেলায় চলতি বছরে পাট কাটা ও ধোয়ার শ্রমিক সংকট। তাই শ্রমিকের কদরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে বেশি দাম দিয়েও শ্রমিক নিচ্ছে গৃহস্তরা।’