ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে শুরু হওয়া বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৪৩ জন শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে দুঃস্বপ্নের মতো পরিস্থিতি চলছে। স্থানীয় একটি পর্যবেক্ষক গ্রুপের হিসেব অনুযায়ী দেশটির বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৩৬ জন। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেয় সেনাবাহিনী। এর প্রতিবাদে দেশটিতে প্রতিদিনই বিক্ষোভ চলছে। নিরাপত্তা বাহিনীর দমন নীতি সত্ত্বেও বৃহস্পতিবারও রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরুতে সেনা সরকার শুরুতে জলকামান ব্যবহার করলেও পরে রাবার বুলেট ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে।
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, মিয়ানমারের বিক্ষোভে নিহত সবচেয়ে কম বয়সী শিশুটির বয়স মাত্র ছয় বছর। খিন মিয়ো চিট নামে এই শিশুটির পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন মার্চের শেষ দিকে তাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযানের মধ্যে দৌড় দিয়ে বাবার কাছে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয় শিশুটি। তার বোন মায় থু সুমায়া (২৫) বলেন, ‘তারা দরজা খুলতে লাথি মারছিলো। দরজা খুলে গেলে তারা আমার বাবা কোথায় এবং বাড়িতে অন্য কেউ আছে কিনা তা জানতে চায়।’
না সূচক উত্তর দেওয়ার পর মিথ্যা বলার অভিযোগ এনে বাড়ি তল্লাশি শুরু করে। ওই সময়ে খিন মিয়ো চিট বাবার দিকে দৌড় দেয়। মায় থু সুমায়া বলেন, ‘সেই সময়ে তারা গুলি চালায় আর তাতে খিন মিয়ো বিদ্ধ হয়ে মারা যায়।’ নিহতদের মধ্যে রয়েছে ১৪ বছরের আরেকটি ছেলে শিশু। মান্দালয়ে নিজ বাড়ির ভিতরে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া রাস্তায় খেলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইয়াঙ্গুনে মারা গেছে আরেক শিশু।
সেভ দ্য চিলড্রেন সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর দমন অভিযানে আহত শিশুর সংখ্যাও অনেক বেশি। সংস্থাটি বলছে, ভয়, আশঙ্কা আর চাপে ভুগতে থাকা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে মিয়ানমারের সহিংসতা। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শিশুরা সহিংসতা ও ভীতি প্রত্যক্ষ করছে। এটা স্পষ্ট যে মিয়ানমার আর শিশুদের জন্য নিরাপদ জায়গা নয়।’