রাশিয়া বিশ্বব্যাপী মিত্রদের কাছে উন্নত অস্ত্র বিক্রি করতে এবং সামরিক প্রযুক্তির উন্নয়নে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার অত্যাধুনিক ও সর্বশেষ অস্ত্রগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় অনেক উন্নত।
সোমবার (১৫ আগস্ট) মস্কোর বাইরে অস্ত্র প্রদর্শনীর একটি অনুষ্ঠানে পুতিন একথা বলেন। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে প্রায় ছয় মাস ধরে সামরিক অভিযান চললেও দেশটির দু’টি বৃহত্তম শহর থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে রুশ বাহিনী। এমনকি তীব্র আক্রমণ চালিয়েও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সাফল্য বেশ ধীর গতিতেই আসছে।
কিন্তু এরপরও মস্কোর বাইরে একটি অস্ত্র প্রদর্শনীতে ভাষণ দেওয়ার সময় পুতিন জোর দিয়ে বলছেন, রাশিয়ার অস্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর হাতে থাকা অস্ত্রের তুলনায় অনেক উন্নত। এমনকি (প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায়) রাশিয়ান অস্ত্রশস্ত্র কয়েক বছর এগিয়ে আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সোমবারের ওই অস্ত্র প্রদর্শনীতে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকার (দেশগুলোর) সাথে দৃঢ় সম্পর্ক প্রত্যাশা করে রাশিয়া। একইসঙ্গে মস্কোর অংশীদার এবং মিত্রদের সবচেয়ে আধুনিক ধরনের অস্ত্র দিতেও প্রস্তুত আমরা।
তিনি আরও বলেন, ‘মিত্রদের সরবরাহ করতে চাওয়া এসব সমরাস্ত্রের মধ্যে ছোট অস্ত্র থেকে শুরু করে সাঁজোয়া যান এবং কামান, যুদ্ধ বিমান এবং মনুষ্যবিহীন আকাশযান রয়েছে। এসব অস্ত্রের প্রায় সবগুলোই বাস্তব যুদ্ধ ও অভিযানে একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে।’
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, রাশিয়া নতুন মডেল এবং সিস্টেম অফার করতে পারে: ‘আমরা উচ্চ-নির্ভুল অস্ত্র এবং রোবোটিক্স সম্পর্কে কথা বলছি, নতুন শারীরিক নীতির ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ ব্যবস্থা সম্পর্কে কথা বলছি। এসব অস্ত্রগুলোর মধ্যে অনেকগুলো আবার তাদের বিদেশি সমকক্ষদের (হাতে থাকা অস্ত্র) থেকে কয়েক বছর বা কয়েক দশক পর্যন্ত এগিয়ে। এমনকি কৌশলগত এবং প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে রাশিয়ার এসব অস্ত্র অন্য দেশগুলোর চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে উচুতে রয়েছে।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
বিবিসি বলছে, রাশিয়া মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প এলাকা ডনবাস দখল করতে চাইছে। এই ভূখণ্ডটি লুহানস্ক এবং দোনেতস্ক নামে দু’টি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সেখানে রুশপন্থি দু’টি বিদ্রোহী স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
অবশ্য ডনবাস এলাকায় রাশিয়াকে মোকাবিলায় হিমারস (HIMARS) নামে পরিচিত রকেট সিস্টেম ব্যবহার করছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে কিয়েভের সেনারা ইতোমধ্যেই রুশ অবস্থানে হামলা চালিয়েছে।
তবে এরপরও পুতিন বলছেন, পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার বাহিনী এবং মস্কো সমর্থিত যোদ্ধারা তাদের সকল কাজ সম্পন্ন করছে। পুতিনের ভাষায়, ‘ধাপে ধাপে, তারা ডনবাসের ভূখণ্ডকে মুক্ত করছে।’
প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও বলেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, রাশিয়া বিস্তৃত ব্যাপক উন্নয়ন (এবং) সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতার পক্ষে। বর্তমান উদীয়মান বহুমুখী বিশ্বে আস্থার জায়গা থেকে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’