স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, দেশে তিন কারণে গুমের ঘটনা ঘটে। কারণে হিসেবে ঘৃণ্য অপরাধ, ঋণের কারণে দেউলিয়া ও পারিবারিক সমস্যার শিকার হওয়ার কথা বলেন তিনি।
রোববার (১৪ আগস্ট) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাসলেতের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন দেশে তিন কারণে ডিসঅ্যাপেয়ার (গুম) হয়। প্রথম কারণ হচ্ছে ঘৃণ্য অপরাধ, ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণে জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হয়ে গা ঢাকা দেয়া ও যারা পারিবারিকভাবে অসুবিধায় পড়ে এ তিন ধরণের লোকদের গা ঢাকা দিতে দেখেছি। এটাই হাইকমিশনরাকে বলেছি। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাদের গ্রেফতার করে তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করে দিই।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার আগেই আমাদের কিছু লিখিত প্রশ্ন দিয়ে দিয়েছিলেন। যেগুলো নিয়ে তিনি আলাপ করতে চেয়েছিলেন। তাদের জিজ্ঞাসা ছিল, অনেকে মিসিং হয়ে যায়। অনেক নৃশংসতা বাংলাদেশে হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কী করেছি? এছাড়া দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি নিয়েও জিজ্ঞাসা করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা তাকে বলেছি আমাদের জাতির পিতা যিনি আমাদের দেশটি স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতার সাড়ে ৩ বছরের মাথায় জাতির পিতাকে শাহাদাৎ বরণ করতে হয়েছে। কাজেই সবসময় আমাদের দেশে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত লেগেই আছে। আমরা অন্ধকার যুগ পেরিয়ে যার ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, তার (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে বাংলাদেশ চলছে। আমরা সেই অন্ধকার থেকে বাংলাদেশ তৈরি করেছি। আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন। আমাদের সংবাদপত্র সব স্বাধীন। আমরা বলেছি আমাদের এখানে এক হাজার ২৬৫টি স্বীকৃত দৈনিক সংবাদপত্র আছে। সব মিলিয়ে সংবাদপত্র আছে ৩ হাজার ১৫৪টি। মোট টিভি চ্যানেল আছে ৫০টি। এগুলো স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রচার করছে। তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাধীনতা পেয়ে তারা যা ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকে, মতামত প্রকাশ করে থাকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও তিনি (জাতিসংঘের হাইকমিশনার) কথা বলেছেন। আমরা বলছিলাম, এটার সবচেয়ে বড় শিকার হলেন মহিলারা, শিশুরা। খুব কম সংখ্যক ৩ শতাংশের বেশি নয় রাষ্ট্রীয়ভাবে মামলা হয়েছে। এদের নিরাপত্তার জন্যই আইনটি ছিল। আইনমন্ত্রী বলেছেন, এটাকে আরেকটু সতর্কতার সাথে প্রয়োগ করতে, আমরা সেটাই করছি। এখন কেউ মামলা করলে আমরা দেখি সে অপরাধটা করেছে কিনা- অপরাধ করলে মামলাটা নেওয়া হয়। তিনি বলেছেন আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের ৭৬ জনের মিসিং বা ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স পারসনের তালিকা দেওয়া হয়েছিল। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি এ ৭৬ জনের মধ্যে ১০ জন তাদের বাড়িতেই আছেন। দুজন জেলখানায় আছেন। যারা ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স হয়ে আছেন, আমরা তাকে বলেছি আমাদের দেশে তিনটি কারণে ডিসঅ্যাপেয়ার হয়, প্রথম কারণ হচ্ছে ঘৃণ্য অপরাধ যারা করে, ভিডিওর মাধ্যমে আমরা দেখিয়েছি। পুলিশকে পিটিয়েও তারা হত্যা করেছে। আমরা এটাও দেখিয়েছি, কীভাবে তারা মানুষের সম্পদ ধ্বংস করেছে। যারা এগুলো করেছে তারা সীমান্তের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বিভিন্ন দেশে চলে গিয়েছে। তারা ভারত কিংবা মিয়ানমার কিংবা অন্য কোনো জায়গায় তারা আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া দেউলিয়া হয়ে এবং পারিবারিকভাবে অসুবিধায় পড়ে ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স হয়।
সরকারের এ মন্ত্রী আরও বলেন, যেহেতু বিচার বিভাগ স্বাধীন। কাজেই বিচার কাজকে এড়ানোর জন্যই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সেগুলোর নমুনা আমরা তাদের দিয়েছি। আর একটি বিষয় আমরা তাদের বলেছি যারা দেউলিয়া হয়ে যায় পাওনাদার বেড়ে যায়। ফলে পাওনাদারদের এড়ানোর জন্য গায়েব হয়ে যায়, আত্মগোপনে যায়। আমরা যখন অভিযোগ পাই তখন আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করে আনলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। আবার পারিবারিক কারণেও অনেকেই গুম হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ৭৬টি যে গুমের ঘটনা এসেছে সেগুলো নিয়ে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে দেখেছেন তাতে কোনো সত্যতা নেই। তারপর আমরা বলেছি নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন হয়েছিল; সেখানেও র্যাবের যে সদস্য যুক্ত ছিল- তারা আইনের মুখোমুখি হয়েছে, শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছে জজ কোর্টের মাধ্যমে। কক্সবাজারেরও একটি ঘটনায় শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
কাজেই যে অন্যায় করে তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হয়। আমরা আরও বলেছি, প্রধানমন্ত্রী যখনই ক্ষমতায় এসেছেন তখনই তিনি আইনের শাসন তো বটেই বাংলাদেশ থেকে এ সমস্ত অন্যায় অত্যাচার এ সব কিছু বন্ধ করার জন্য আমরণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সবদিক থেকে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শুধু আইন শৃঙ্খলা নয়; যাতে করে দেশ এগিয়ে যায়, বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।
মিয়ানমারের ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কথা বলেছি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তারাও এদের দুঃখের, কষ্টের কথা স্বীকার করলেন। তারা জানে আমরা মাদক তৈরি করি না। কিন্তু ভৌগলিক কারণে আক্রান্ত হচ্ছি। ইয়াবা, আইস মিয়ানমার থেকে আসে এবং অন্যান্য দেশ কোকেনসহ বিভিন্ন মাদক আসে। সেগুলি বন্ধ করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। মিয়ানমারের সাথে সমস্যা সমাধানের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের সঙ্গে বহুবার বসেছি। তারা সব সময় অনেক অঙ্গিকার করেছেন সেগুলোর একটাও তারা রাখেনি, উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।