বৈশ্বিক সংকটের কারণে পণ্য আমদানি ব্যাহত হওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, তবে অর্থনীতি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম । রোববার (১৪ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে ২০২১-২২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন, ২০২২) বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ।
প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, স্থানীয় বাজারে ডলারের ওপর চাপ কমানো, ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার দ্রুত বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে পণ্য আমদানি ব্যাহত হওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, তবে অর্থনীতি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কোন কারণ নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকে আমানতের সুদের হার কিছুটা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে দেশের উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২৩ শতাংশ, যা আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইতিবাচক দিককে বহন করে।
মন্ত্রী বলেন, হয়রানি রোধ, কর আহরণ বৃদ্ধি এবং করজাল সম্প্রসারণে দেশের রাজস্ব কাঠামোর অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমরা প্রায় ১০ লাখ শ্রমিককে বিদেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি, যার ফলে আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ পাট, চামড়া ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাতের প্রতিটি থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হয়, এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়াতে সম্ভাবনাময় খাতসমূহের ওপর বেশি নজর দিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বলেন, কোভিডকালীন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যবসায়ী সমাজ বিশেষ করে এসএমই খাতের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই জ্বালানি সংকটে রয়েছে, আমাদের টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে অফশোর গ্যাস কূপ অনুসন্ধান কার্যক্রম বৃদ্ধির পাশাপাশি বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এ মুহূর্তে বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়, সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে, তারপরও আমাদের রিজার্ভ সাড়ে ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম, যা বেশ স্বস্তিদায়ক।
ব্যবসায়ী নেতা বলেন, দেশের ব্যবসায়ী সমাজের পাশাপাশি সার্বিকভাবে অর্থনীতির অধিকতর অগ্রগতির লক্ষ্যে রাজস্ব বিভাগকে হয়রানির মনোভাব পরিহার করে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান তার মূল প্রবন্ধে অর্থনীতিতে বৈশ্বিক সংকট ও কোভিড মহামারির প্রভাব, এলডিসি উত্তরণ, জাতীয় বাজেট ও মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে গত অর্থবছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৯.৫% এবং আমাদের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪০.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এছাড়াও কোভিড মহামারির কারণে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের হার ২৩.৭% নেমে এসেছে, যদিও গত অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি প্রথমবারের মত ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তিনি জানান, এলডিসি উত্তরণের কারণে আমাদের রপ্তানি আয় প্রায় ৫.৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে যেতে পারে, তা মোকাবিলায় বিদ্যমান শুল্ক প্রতিবন্ধকতা নিরসন, বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে ‘রিজিওন্যাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনেমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সেপা)’ স্বাক্ষর এবং দ্রুত ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণ করা অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইন প্রভাবিত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যের ঊর্ধ্বগতি মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে দেশের সাধারণ জনগণ, এ অবস্থা নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করছে, তবে স্থানীয় বাজারে ডলারের মূল্যের অস্থিতিশীলতা নিরসনে আশু পদক্ষেপ প্রয়োজন।