প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে মানবপাচার সাইবার স্পেসে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এ অপরাধ রোধে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শনিবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব মানবপাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারা এ আহ্বান জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মানবপাচার একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ বিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। আমরা এ ভয়াবহ অপরাধের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছি। পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সব পক্ষের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। মানবপাচার প্রতিরোধে অনলাইনে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকার কাজ চালিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মানবপাচার একটি আন্তঃসীমান্ত বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ। পাচারকারীরা একটি নির্দিষ্ট দেশে প্রযুক্তির ব্যবহারে ভালো হতে পারে এবং তাদের কাছে উন্নত প্রযুক্তি থাকতে পারে। আমরা আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি যে, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সনদ ও উদ্যোগের মাধ্যমে মানবপাচার প্রতিরোধ করব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবপাচারকারীরা আরও বেশি ক্ষতি করে। তবে সরকারি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে পাচারকারীর প্রচেষ্টাকেও প্রতিহত করতে পারেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, পাচারের শিকার ব্যক্তিরা শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হন। তারা হয়রানি, জোরপূর্বক শ্রম, জোরপূর্বক ও অবৈধ বিয়ে, মৃত্যুর মতো পরিস্থিতিতে পরেন। সর্বস্তরে মানবপাচার প্রতিরোধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন বলেন, মানবপাচার রোধে বাংলাদেশ সরকারের আইন ও নীতি রয়েছে। এ ছাড়াও, অভিবাসন সংক্রান্ত গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ব্যক্তি পাচার নির্মূল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের এখন জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন করে মানবপাচারের মতো জঘন্য অপরাধের অবসান ঘটাতে হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেমন মানবপাচারকারীরা তাদের কাজ করছে আমরাও প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারি। মহামারির কারণে পাচারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও পাচার অন্যতম সমস্যা। পাচার রোধে আমরা বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে সাহায্য ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, মানবপাচার রোধে সুইজারল্যান্ড সরকার ও বাংলাদেশ সরকার গত ১২ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে পাচার বেড়েছে। তবে আমরাও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পাচার রোধ করতে পারি।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে প্রযুক্তি অনেক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। মানবপাচার নির্মূলের প্রচেষ্টায় ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য আইন প্রয়োগকারী এবং অপরাধমূলক বিচার ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান এবং বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশনের সমন্বয়কারী আবদুসাত্তর এসয়েভ বলেন, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার নিরাপদ ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম করলে মানবপাচারের ঝুঁকি কমবে। মানবপাচার দমন এবং প্রতিরোধে সহায়তার জন্য টেকসই প্রযুক্তি-ভিত্তিক সমাধানে বেসরকারি খাতের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বেসরকারি খাতের উদ্ভাবন ও দক্ষতা কাজে লাগাতে পারি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বিদেশ যান, যাদের অনেকেই পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। কোনো কোনো অভিবাসী ঋণ, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন শোষণ, জোরপূর্বক বিয়ে এবং আধুনিক দাসত্বের শিকার হন।
অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স জেরেমি ওপ্রিটেসকো ও বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন স্কট ব্র্যান্ডন উপস্থিত ছিলেন।