বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় চলতি বছরই তিন হাজার ডলারে উন্নীত হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। সেই অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। বর্তমানে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৮২৪ ডলার, তা চলতি বছরেই তিন হাজার পার হবে। যদি বড় ধরনের কোনো সংকট তৈরি না হয় তা কমার সম্ভাবনা নেই।
বুধবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে একশন এইড বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত ‘যুব জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ঝুঁকি : উন্নয়ন নীতি এবং বরাদ্দ পরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশই কৃচ্ছতাসাধন নীতি অনুসরণ করছে। জ্বালানি সংকট, খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিসহ আমদানি-রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়েছে। আর এটা শুধু বাংলাদেশে নয় পুরো বিশ্বে। শুধু টাকার মান কমেছে এটি সঠিক নয়। ইউরো, ইয়েন ও রুপিসহ অনেক দেশের মুদ্রার মান কমেছে।
তিনি বলেন, সব দেশের সরকারই একটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য পলিসি গ্রহণ করে কাজ করে। পৃথিবীর কোনো দেশই গৃহীত পলিসি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারে না, সম্ভবও নয়। পরিবর্তন একদিনে আসে না। চোখের পলকে দেশকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। বিশ্বের কোনো দেশই পারেনি। সময়ের ব্যবধানে ধীরে ধীরে একটি দেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করতে হলে যুব সমাজকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যুবারা দেশের শক্তি। আগামীর উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নের সারথী তারা। তাদের অংশগ্রহণ দেশকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ করে দেবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিতে পথ নকশা তৈরি করেছেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করে চলেছেন। দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, সাফল্যের গল্প আছে। এগুলো অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। সমালোচনা থাকবেই। কোনো দেশের সরকার সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। আমাদের সাফল্য নেই একথা ঠিক নয়। এক সময় দেশের মানুষ অনাহারে থাকতো। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন এসেছে। খাদ্য ঘাটতি দূর করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ কৃষি, শিল্প কলকারখানা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সব খাতে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, দেশে একসময় রাস্তাঘাটে চলাচল করা যেতো না। নারীরা রাতের বেলা বের হতে পারতো না। মানুষের মধ্যে সবসময় এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করতো। সন্ত্রাসী ও গুন্ডাবাহিনীকে লালন-পালন করা হয়েছে। কিন্তু এখন আর সেই সময় নেই। দেশের মানুষ নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারছে। নারীরা রাতের বেলা ঘোরাফেরা করছে নিরাপদে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছেন। দেশের মানুষকে সুখে এবং নিরাপদে রাখায় সরকারের মূল লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, প্রভাষক শাকিল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।