পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় প্রভাব পড়েছে ঢাকা-বরিশাল নৌ-পথে চলাচলকারী লঞ্চে। সেতুর উদ্বোধনের পর দেখা গেছে লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। সময় কম লাগায় যাত্রীরা নদীপথ পরিহার করে সড়ক পথে ভ্রমণ শুরু করেছেন। তবে অসুস্থ ও পরিবার-পরিজন নিয়ে যাত্রীরা লঞ্চেই যাচ্ছেন।
এ রুটের যাত্রীরা বলছেন, সড়ক পথে দ্রুত ও ঝামেলাহীনভাবে যেতে পারার কারণে নদীপথ লঞ্চে যাত্রী কমেছে। তবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের দাবি, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় নৌ-পথে তেমন প্রভাব এখনো পড়েনি। দু-একদিনের হিসেব কষে লঞ্চের যাত্রী কমেছে বলা ঠিক হবে না, এটা বুঝতে মাস খানেকের মতো সময় লাগবে।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বরিশাল লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, পন্টুনে যাত্রীদের চিরচেনা সেই ভিড় আর নেই। নোঙর করে থাকা ৬টি বিলাসবহুল লঞ্চে যাত্রী পেতে হাঁক-ডাক দিতে দেখা গেছে লঞ্চের কর্মীদের। এসময় তারা উচ্চ শব্দে কেবিন ও সোফা বিক্রির জন্য যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন। লঞ্চগুলোতে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কেবিন খালি রয়েছে। ডেকেও অর্ধেক আসন খালি।
বরিশাল নদী বন্দর সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ঢাকার উদ্দেশে এমভি অ্যাডভেঞ্চার ১, কুয়াকাটা ২, সুন্দরবন ১১, সুরভী ৭, পারাবত ১২ ও পারাবত ৯ নামে ৬টি লঞ্চ বরিশাল ছেড়েছে।
পারাবত ৯ লঞ্চের যাত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, মেয়ে অসুস্থ তাই লঞ্চে ঢাকা যাচ্ছি। নইলে এতো সময় ব্যয় করে লঞ্চে যেতাম না। লঞ্চে ঢাকা পৌঁছতে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা লাগে। আর সড়কপথে বাসে যেতে সময় লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা।
আরজুদা বেগম নামে সুন্দরবন ১১ লঞ্চের এক যাত্রী বলেন, বাসে উঠলে অসুস্থ হয়ে যাই। তাই সময় বেশি লাগলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদে লঞ্চে ঢাকা যাচ্ছি।
সুরভী ৭ লঞ্চের যাত্রী ব্যবসায়ী কবির জোমাদ্দার বলেন, আজকে যাত্রী অনেক কম। পুরো ডেক ভরেনি৷ কেবিনেও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ভাড়া কমিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় ব্যবসার কারণে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে ৭ বছর ধরে যাতায়াত করি। আজ এসে মনে হলো যাত্রীদের বেশ কদর করছে লঞ্চ স্টাফরা। পন্টুন ঘুরে শুনলাম সব লঞ্চই কেবিনের যাত্রী খুঁজছে। এমন যাত্রী আকাল আগে দেখিনি।
নাইম হাওলাদার নামে পারাবত ১২ লঞ্চের এক যাত্রী বলেন, আগে ডাবল কেবিন ২৪০০ টাকার কমে বিক্রি করতো না। আজকে ১৮০০ টাকায় নিলাম। সিঙ্গেল কেবিন আগে ১৪০০ টাকা থাকলেও আজ ১ হাজার টাকায় বিক্রি করতে দেখলাম।
এমভি সুন্দরবন লঞ্চ কাউন্টার ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, সড়কের সঙ্গে লঞ্চের যাত্রীর হিসেব কষলে হবে না। লঞ্চে ডেকের যাত্রীরা শুয়ে-বসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে ঢাকায় যেতে পারেন। আর এসব যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিয়ে বাসে যাবেন না। আবার লঞ্চের কেবিনে যারা যান তাদের হিসেবও আলাদা। রাতের বেলা কেবিনে ঘুমিয়ে যাওয়াটা সব থেকে বেশি নিরাপদ ও আরামদায়ক। এ কারণে এখনই আমাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। যাত্রী নৌপথে আদৌ কমবে কিনা তা আসন্ন ঈদের ছুটির পরে বোঝা যাবে। যারা বলছে যাত্রী কমেছে তারা ভুল বলছেন। কারণ ঈদের আগ মুহূর্তে এ সময়টাতে বরিশাল থেকে সব সময় যাত্রী কম থাকে।
বরিশাল নদী বন্দরের কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লঞ্চে কিছু যাত্রী কমেছে। তবে কেবিনের যাত্রী বেশি কমেছে। কেবিনের ভাড়া কমানোর বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে যাত্রী ধরে রাখতে মালিকরা ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে সার্বিকভাবে লঞ্চের যাত্রী কমবে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে গত রোববার সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর থেকেই বরিশালে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর কাউন্টার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেতু চালু হওয়ার পর শতকরা ৩০ ভাগ যাত্রী বেড়েছে ঢাকা-বরিশালের সড়কপথে। সাড়ে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় মানুষ বাসে আসা-যাওয়া করছে।
বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, সেতু চালু হওয়ার পর এই রুটে যেমন বাসের সংখ্যা বেড়েছে, তেমনই বাড়ছে ট্রিপ। আগে ফেরি পার হয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে দেড়শর মতো ট্রিপ দিত বাসগুলো। গত দুই দিনে তা বেড়ে ৩ শতাধিক হয়েছে।
সেতু চালুর পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রী বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, এখনই স্পষ্ট কিছু বলা সম্ভব নয়। এখন অনেকেই আনন্দে অথবা সেতু দেখার জন্য বাসে যাওয়া-আসা করছে। ২/৩ মাস গেলে বোঝা যাবে আসল অবস্থা।