গত কয়েক বছর রমজান শুরু হওয়ার আগেই খুচরা ও পাইকারি বাজারে ছোলার দাম বেড়েছিল। এ বছরও রমজান আসার আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়লেও ছোলার ক্ষেত্রে প্রভাবটা এখনও লক্ষ্য করা যায়নি। ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা বলছেন, পর্যাপ্ত মজুত থাকার ফলে এ বছর ছোলার দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
তবে তারা এও বলছেন, দেশে এখন ছোলার মজুত ঠিকই আছে। তারপরেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মজুত বাড়িয়ে বেশি দামে ছোলা বিক্রি করে। তখন সকল ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করা হয়। এ বছর এমন ঘটনা না হলে ছোলাসহ খেসারি ডালের দামে বাজারে তেমন কোনো হেরফের হবে না।
বাংলাদেশ পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ বলেন, ‘দেশে এখন পর্যাপ্ত ছোলা মজুত রয়েছে। গত বছর থেকে করোনার প্রকোপ থাকার কারণে বিক্রি অনেক কম ছিল। সারা বছর যে ছোলা আমদানি হয়েছে, সেগুলোর অর্ধেকটা রয়েছে। তারপর আবার রমজান উপলক্ষে ছোলা ডাল আমদানি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ছোলার দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।’
তিনি জানান, দেশের আমদানি ছোলার বড় অংশ আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে। এছাড়া কানাডা ও মিয়ানমার থেকে ছোলা আসে অল্প কিছু। করোনা মহামারিতে ছোলা আমদানিতে কোনো সমস্যা হয়নি। মিয়ানমারের অস্থিতিশীলতার কোনো প্রভাবও পড়েনি ছোলার বাজারে।
এদিকে সোমবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ছোলা। কয়েকসপ্তাহ আগেও একই দাম ছিল। নতুন করে পণ্যটির দাম বাড়েনি। এদিকে মৌলভীবাজারে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কমতে শুরু করেছে ছোলা ও ছোলার ডালের দাম। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ান ছোলা ৬৪ টাকা, মিয়ানমারের ও কানাডার ছোলা ৬০ থেকে ৬২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী রোজার মাসে ছোলার চাহিদা ৮০ হাজার টন। সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত আমদানি ও মজুদের পরিমাণ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান কয়েকজন আমদানিকারক। চকবাজার এসএম ইন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ফজলুল হক বলেন, এখনও দেশে যে ছোলা রয়েছে, তা দিয়ে রমজান চলবে। এরপরও প্রতিদিন ছোলা আসছে। ছোলার দাম বাড়তি নয়, উল্টো কমতির দিকে যেতে পারে।
এবার রমজানে সবচেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি করবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটি ১ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত সারাদেশে ৫০০ ট্রাকে ছোলাসহ অন্যান্য পণ্য বেচবে। এ বছর ১০ হাজার টন মসুর ডাল ও ছোলা বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্থাটি। টিসিবির আরেক তথ্য বলছে, দেশের খুচরা বাজারে এখন ছোলার দাম কমেছে। আগে বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। যা এখন ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে বছর ব্যবধানে পণ্যটির দাম এখন ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম।
পাশাপাশি রমজানে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসি মার্জিনের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দিয়ে সম্প্রতি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব পণ্যের তালিকায় রয়েছে ছোলা ও ডাল। এতে করে আমদানি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।