এখন থেকে শ্রীলঙ্কার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সপ্তাহে চারদিন অফিসে যেতে হবে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জ্বালানি বাঁচানো এবং সরকারি চাকরিজীবীদের খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহ দিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবারেই এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আগামী তিন মাস প্রতি শুক্রবার সরকারি দপ্তর বন্ধ থাকবে। তার কারণ হিসেবে প্রস্তাবে বলা হয়, জ্বালানি সংকটের কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে আসা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এতদিন শ্রীলঙ্কায় সাপ্তাহিক ছুটি ছিল দুই দিন—শনি ও রবিবার।
১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ইতিহাসের সবথেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। ভারত মহাসাগরের ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে বৈদেশিক মু্দ্রার রিজার্ভ না থাকায় জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মত অতি জরুরি পণ্যও আমদানি করতে পারছে না দেশটির সরকার।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের কৃষি উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত শ্রীলঙ্কার সরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত লোকজনের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ।
তীব্র জ্বালানি সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েকমাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস কিনতে লোকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
যে কোনো সময় শ্রীলঙ্কায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে গত সপ্তাহে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়া দেশটির ১০ লাখের বেশি মানুষকে সহায়তা করতে জাতিসংঘ থেকে শ্রীলঙ্কায় চার কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের সহায়তা তহবিল প্রদানের পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং দেশটির সরকার রাসায়নিক সারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার যে নীতি নিয়েছে তার ফলে গত এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কায় খাবারের দাম ৫৭ শতাংশ বেড়ে যায়।
শ্রীলঙ্কা সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ‘বেলআউট’ সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছে। কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলছে এ নিয়ে। আগামী ২০ জুন আইএমএফ প্রতিনিধি দলের কলম্বো যাওয়ার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রও শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। গত সোমবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে ফোনে আলোচনার পর ব্লিনকেন এ কথা জানান।
এক টুইটে ব্লিনকেন বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার সাথে কাজ করতে প্রস্তুত আছে।’
চলতি মাসেই বিক্রমাসিংহে বলেছিলেন, এ বছরের বাকি সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি আমদানি সারতে শ্রীলঙ্কার অন্তত ৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন।