বিনা প্রশ্নে অর্থপাচারের মতো অসাংবিধানিক, আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক প্রস্তাব বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এটি বৈষম্য ও সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থি জানিয়েছে সংস্থাটি।
শুক্রবার (১০ জুন) এক বিবৃতিতে টিআইবির পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা এ সংস্থার মতে, করোনা সংক্রমণ ও রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা, সরকারি ব্যয়ে সংকুলান ও বেসরকারি খাতকে চাঙা করার যুক্তিতে দেশ থেকে পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের অভূতপূর্ব অনৈতিক এক প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থমন্ত্রী যেভাবেই ব্যাখ্যা করেন না কেন, নামমাত্র কর দিয়ে প্রশ্নহীনভাবে পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে আনার সুযোগ স্পষ্টতই অর্থপাচারকারীদের অনৈতিক সুরক্ষা ও পুরস্কার প্রদান। অথচ অর্থপাচার রোধ আইন- ২০১২ এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অর্থপাচার গুরুতর অপরাধ, দেশের আইন অনুযায়ী যার শাস্তি পাচারকৃত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা এবং তার দ্বিগুণ জরিমানা এবং ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড নির্ধারিত রয়েছে। এ সুযোগ অর্থপাচার তথা সার্বিকভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে, যা সংবিধান পরিপন্থি এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’ ঘোষণার অবমাননাকর।
অন্যদিকে, যারা বৈধ উপার্জন নির্ভর করদাতা তাদের জন্য এ প্রস্তাব প্রকটভাবে বৈষম্যমূলক। কারণ, তারা ৭ শতাংশের কমপক্ষে তিন গুণ হারে কর দিয়ে থাকেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ দেশের অর্থনীতির মূলধারায় সংযুক্তির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ও আয়কর রাজস্ব বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বারবার সুযোগ দিয়েও দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাশিত ফল বয়ে আনেনি। সরকারও আকাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পায়নি। তাই নতুন এ বিশেষ বিধানের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে তা না বললেও চলে। কারণ, যারা অর্থপাচার করেছেন তারা এ ধরনের প্রণোদনায় উৎসাহিত হয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত নিয়ে আসবে, এরকম দিবাস্বপ্নের কোনো ভিত্তি নেই।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীরাই শুধু স্বস্তি বোধ করবেন, পুলকিত হবেন। অর্থপাচারকে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া হলে দেশে দুর্নীতি ও অর্থপাচার আরও বিস্তৃতি ও গভীরতা লাভ করবে। এ অন্যায়, অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী পথ থেকে সরে আসার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আমদানি মূল্যস্ফীতির চাপ, ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখা, আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকার মতো বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটগুলোকে স্বীকার করলেও এগুলোকে মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল বা পথনির্দেশিকা দিতে পারেননি– মন্তব্য করেন ড. জামান।
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয়কে বড় করে দেখাতে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ, করোনার অভিঘাত উত্তরণে দেওয়া ঋণের সুদ মওকুফকে অন্তর্ভুক্ত করে দেখানো হয়েছে। যেগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশই নয়! এমন বাস্তবতায় অর্থমন্ত্রীর উল্লিখিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার কার্যকর কৌশল নির্ধারণে বাস্তবসম্মত ও নিরপেক্ষ দিকনির্দেশনার জন্য খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ এবং বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটকে ঢেলে সাজানো উচিত।