সীতাকুণ্ডে একটি কনটেইনার ডিপোতে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ কর্মীসহ এ পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। আহত ও দগ্ধ হয়েছেন আরও চার শতাধিক।
আগুনের উৎস সম্পর্কে বলতে না পারলেও ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সীতাকুণ্ডস্থ বিএম কনটেইনার ডিপোতে একটি দাহ্য পদার্থের কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন লাগার ১২ ঘণ্টা পার হলেও এখনো সেটি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৬টি ইউনিট। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে ডিপো এলাকার পাঁচ কিলোমিটার প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, প্রায় ২৬ একর আয়তনের বিএম কনটেইনার ডিপোতে এখনো আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের ২৪ টি ইউনিট সেখানে কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিসের ৩০ কর্মী ও পুলিশের ১০ সদস্য আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন চার শতাধিকের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা গুরুতর।
এদিকে, আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট সীতাকুণ্ডের ঘটনাস্থলে যাচ্ছে।
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনার পরপরই আহতদের আর্তনাদে এলাকায় বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। প্রথমে স্থানীয়রা এবং ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট অগ্নিনির্বাপনে যোগ দেয়। অবস্থা বেসামাল দেখে কুমিল্লা থেকেও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সীতাকুণ্ডে আসে। রাত ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পানি সংকট সৃষ্টি হয়। পরে বিভিন্নভাবে পানি যোগাড় করে তারা আবার আগুন নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়েন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরণ শুরু হলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নিরাপদ স্থানে সরে যান। ভোর থেকে তারা আবার বিভিন্ন কনটেইনার ও কনটেইনারবাহী লরিতে লাগা আগুন নির্বাপনে কাজ শুরু করেছেন।
অন্যদিকে, আহতদের বিভিন্ন গাড়িতে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো শুরু হয়। ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত সকল স্তরের চিকিৎসকদের দগ্ধ ও আহতদের সেবায় কাজ করতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার আহবান জানান।
সিভিল সার্জনের আহ্বানে সরকারি-বেসরকারি সকল অ্যাম্বুলেন্স সীতাকুণ্ডে গিয়ে আহতদের পরিবহনে লেগে পড়ে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী মধ্যরাতেই চমেক হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সকল পর্যায়ের ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, আগুন লাগার পর তাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদেরকে কনটেইনারে দাহ্য পদার্থ থাকার কথা জানানো হয়। তাদের বলা হয়েছিল, ওই কনটেইনারে গার্মেন্টস পণ্য রয়েছে। এ কারণেই তারা আগুন নেভাতে পানি ছিটিয়েছিলেন। দাহ্য পদার্থের বিষয়ে অবগত হলে তারা পানির পরিবর্তে ফোম ব্যবহার করতো। এতে বিস্ফোরণ ঘটতো না এবং ক্রমান্বয়ে এতগুলো কনটেইনারে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়তে পারতো না।
এদিকে আহত ও নিহতদের স্বজনদের আর্তনাদে মেডিকেলের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছে। রক্ত দেয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা চমেক ব্লাড ব্যাংকে ভিড় করে আছেন।