শ্রীলঙ্কার ইনিংস শুরু হতেই ধীরে ধীরে বদলে গেছে সবকিছু। অধিনায়ক দিমুথ করুনারাত্নের ব্যাটে বাংলাদেশকে ভালোই জবাব দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে দুই দলই যেনো রয়েছে সমানে-সমান অবস্থানে।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ২ উইকেটে ১৪৩ রান। ওশাদা ফার্নান্দো ৫৭ ও কুশল মেন্ডিস ১১ রান করে আউট হয়েছেন। দিমুথ করুনারাত্নে ৭০ ও কাসুন রাজিথা শূন্য রানে অপরাজিত রয়েছেন। বাংলাদেশের চেয়ে এখন ২২২ রানে পিছিয়ে রয়েছে তারা।
বাংলাদেশের ৩৬৫ রানের জবাবে খেলতে নেমে ইনিংসের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলেন ওশাদা। তবে পরের বলেই ঘুরে দাঁড়ান খালেদ আহমেদ। জোরালো কট বিহাইন্ডের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার, উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ওশাদা।
সেখান থেকে আর দমে যাননি লঙ্কার দুই ওপেনার। নিয়মিত ভিত্তিতে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন ওশাদা ও করুনারাত্নে। অধিনায়ক করুনারাত্নের চেয়ে ওশাদাই ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক। দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে মাত্র ১৩তম ওভারেই দলীয় পঞ্চাশ তুলে ফেলে লঙ্কানরা।
ইনিংসের ১৫তম ওভারে ফের আলোচনায় আসে আম্পায়ার্স কল। তাইজুলের করা সেই ওভারের চতুর্থ বলটি আঘাত হানে ওশাদার পেছনের পায়ে। খালি চোখে নিশ্চিত আউট বলেই মনে হচ্ছিল সেটি। কিন্তু সাড়া দেননি আম্পায়ার শরফৌদৌল্লা ইবনে সৈকত। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ।
টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় সেই বলের পিচিং ও ইমপ্যাক্ট ছিল বোলারের পক্ষেই। কিন্তু হিটিং ছিল আম্পায়ার্স কল। অর্থাৎ আম্পায়ার যদি আউট দিতেন, তাহলে সাজঘরে ফিরে যেতে হতো ওশাদাকে। কিন্তু আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় ৩৯ রানে একপ্রকার জীবনই পেয়ে যান ওশাদা। এক ওভার পর নিজের বলে ওশাদার জোরালো শট তালুবন্দী করতে পারেননি সাকিব।
বেশ কয়েকবার এমন সুযোগ দিয়েও বেঁচে যাওয়ার পর ইনিংসের প্রথম ছক্কায় ফিফটি পূরণ করেন ওশাদা। মাত্র ৭৪ বলে সাত চার ও এক ছয়ের মারে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটিটি করেছেন তিনি। সেশনের বাকি সময়টা দেখেশুনেই কাটিয়ে দেন ওশাদা ও করুনারাত্নে। পুরো সেশনটিই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে লঙ্কানরা।
তবে দ্বিতীয় সেশনে ফিরে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ওশাদা। এবাদত হোসেনের করা ২৬তম ওভারে ৯৫ রানের মাথায় অফস্ট্যাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে খোঁচা দিয়ে স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়েন তিনি। আউট হওয়ার আগে তার নামের পাশে ছিল ৮ চার ও ১ ছয়ের মারে ৯১ বলে ৫৭ রানের ইনিংস।
সেই ওভারেই লঙ্কান অধিনায়ক করুনারাত্নের উইকেটও পেতে পারতো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় বলটিতে লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন করেছিলেন এবাদত। সাড়া দেননি আম্পায়ার। লেগ স্ট্যাম্প লাইনের বাইরে পড়েছে ভেবে বাংলাদেশও রিভিউ নেয়নি। সেটিই কাল হয়েছে। রিপ্লেতে দেখা যায় আউট ছিলেন করুনারাত্নে।
তখন করুনারাত্নে খেলছিলেন ৩৬ রানে। পরের ওভারে আবারও জীবন পান তিনি। এবার তাইজুলের বলে শর্ট লেগে দাঁড়িয়ে তালুবন্দী করতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়। দুইবার বেঁচে যাওয়ার পর আর কোনো ভুল করেননি লঙ্কান অধিনায়ক। তিন নম্বরে নামা কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে এগিয়ে নিতে থাকেন রানের চাকা।
তবে দিনের খেলা শেষ হওয়ার তিন ওভার আগে সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি জালে ধরা পড়েন কুশল। নিখুঁত আর্মারে লেগ বিফোর হওয়ার আগে ৪৯ বলে ১১ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। কুশলের বিদায়ে ভাঙে ৪৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। এরপর নাইটওয়াচম্যান রাজিথাকে নামায় শ্রীলঙ্কা। তাকে নিয়ে নিরাপদেই বাকি সময় কাটান করুনারাত্নে।
এর আগে প্রথম দিন করা ৫ উইকেটে ২৭৭ রানের সঙ্গে আজ ৩১.২ ওভার খেলে আরও ৮৮ রান যোগ করে বাংলাদেশ। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা লিটন দাস আউট হন ১৪১ রান করে। অনেক কীর্তি গড়া ইনিংসে মুশফিকুর রহিম অপরাজিত থেকে যান ১৭৫ রান করে। বাংলাদেশ অলআউট হয় ৩৬৫ রানে।