আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছে বিএনপি। শিগগিরই এই সিরিজ বৈঠক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। গত জানুয়ারিতে সরকার বিরোধী সব দলের সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়েছিল দলটি। এজন্য দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে তিনটি টিম গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে তারা প্রায় ৩০টি দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছেন।
আর কারা কোন কোন দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন আজ বিএনপি’র স্থায়ী বৈঠকে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে রোজায় বিভিন্ন দলের নেতাদের নিয়ে ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করলেও পরে তা বাতিল করে বিএনপি। তবে ওই কর্মসূচি বাতিল হলেও সমমনা দলগুলোর প্রায় সব ইফতার পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা।
বিএনপি’র দুইজন সিনিয়র নেতা মানবজমিনকে বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। বিরোধী নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে দাবি আদায়ে একসঙ্গে জোটবদ্ধ না হয়ে যুগপৎ কর্মসূচির বিষয়ে মূলত কথা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারবিরোধী আন্দোলন একই পথে গিয়ে দাঁড়াবে যেটি হবে রাজপথের ঐক্য।
চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনের দু’টি দলের শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন তদারকি কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব দাবির বিষয়ে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধীদলগুলোর মধ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক অবস্থানের ঐক্য রয়েছে। এই ঐক্যটা ধরে কীভাবে রাজপথে নামা যাবে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। আমরা চাই মানুষ দেখুক বিরোধীদলগুলো আগামীর আন্দোলনে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছে। আমরা হয়তো এক মঞ্চ করতে পারবো না। কিন্তু সমন্বিতভাবে যুগপৎ আন্দোলন কীভাবে করা যায় এবং তার কৌশল নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবো।
বিএনপি’র দলীয় সূত্র জানায়, সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি’র পৃথক টিম বৈঠক করবে। সম্ভব হলে টিমগুলো বিরোধী দলঘগুলোর কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠক করবে। বৈঠকে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি সম্ভাব্য ঐক্যের রূপরেখা নিয়েও কথা হবে। বিএনপি’র সমমনা দলগুলোর দাবি, নিছক সরকার পতনের জন্য আন্দোলন তারা করছেন না। সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদসহ সংবিধান গণতান্ত্রিক করা, রাষ্ট্র বা সরকার পরিচালনায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো যেভাবে অলিখিত দায়মুক্তি ভোগ করে এদেরকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ কালো আইনগুলো কীভাবে বাতিল করা যায় তা নিয়ে সামনে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সমমনা দলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিভিন্ন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা খুব সহসা শুরু করবো আমরা। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের কাজ চলছে। খুব দ্রুতই আমরা আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবো। বিভিন্ন দলের অফিসে যাবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামীর আন্দোলন কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবো এ বিষয়ে মূল আলোচনা হবে। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমাকে ফোন করা হয়েছে। আমরা বৈঠকের সময়ও ঠিক করছি। শিগগিরই বসবো তাদের (বিএনপি) সঙ্গে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, বৈঠকের বিষয়ে বিএনপি’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। কবে নাগাদ এই বৈঠক হতে পারে একটা সম্ভাব্য দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সময় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, বিএনপি’র সঙ্গে আমরা ঐক্যবদ্ধ কোনো জোটে যাচ্ছি না। এটা একদম স্পষ্ট। জনগণের প্রত্যাশা অনুয়ায়ী রাজপথের আন্দোলন যুগপৎভাবে কীভাবে জোরদার করতে পারি সেই বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।