বিএনপি নেতাদের পালানোর পথ খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। শনিবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা শ্রীলঙ্কার তুলনা বাংলাদেশে দেয়, তারা অনেক আগেই শ্রীলঙ্কার মতো পালিয়েছেন। কেননা শ্রীলঙ্কার আজকের মতো পরিস্থিতিতে তারাও পড়েছিলেন, তাই তারা এসব কথা বলছেন। শ্রীলঙ্কার নেতারা এখন যেভাবে পালাচ্ছেন, বিএনপি নেতারাও সেভাবে আগেই পালিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, তারেক রহমান ‘আমি আর রাজনীতি করবো না’ মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে গেছেন। ঢাকায় তাদের নেতা মাহবুবুর রহমানকে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ ধাওয়া করেছিলেন, জুতা নিক্ষেপ করেছিলেন। ’৮০ সালে জিয়াউর রহমান যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান তখন তাকেও ধাওয়া করা হয়েছিল। এখন আপনারা নিজেরা কীভাবে পালাবেন সেই পথ খুঁজুন।
ড. হাছান মাহমুদ জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভীসহ বিএনপি নেতারা পদ্মা নদীর ওপারে কীভাবে যাবেন তিনি তা দেখার অপেক্ষায়। তারা কী গাড়িতে চড়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাবেন, নাকি আওয়ামী লীগের নৌকায় চড়ে ওপারে যাবেন, তিনি সেটি দেখার অপেক্ষায়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার যখন পদ্মা সেতু করছিল, তখন বিএনপি দেশে গুজব ছড়িয়েছিল যে, পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে মানুষের মাথা লাগবে। আবার সরকার যখন ভারত থেকে করোনা টিকা এনে দেশের মানুষকে দেওয়া শুরু করলো, তখন বিএনপি গুজব ছড়ালো ওই টিকা কাজ করে না। রিজভী সাহেব বক্তব্য দিলেন, আমাদের করোনা টিকা অকেজো। পরে তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে ঠিকই টিকা নিলেন। আমাদের চট্টগ্রামের ডা. জাফরুল্লাহও কথা বলেছিলেন টিকা নিয়ে। পরে তিনিও লজ্জা ভেঙে টিকা নেন এবং বলেন, ‘আমার আরাম লাগছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, তৃণমূল হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রাণ। জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের নেতারাই এ দলকে টিকিয়ে রেখেছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে নানা সমস্যা নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অনেক নেতা দ্বিধান্বিত ও বিচলিত হয়েছেন, অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন, মূল নেতৃত্বের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। কিন্তু তৃণমূল কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেইমানি করেনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা আজ প্রায় সাড়ে ১৩ বছর ক্ষমতায়। এতদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের অনেকের মধ্যে আলস্য এসেছে। দলের মধ্যে সুবিধাবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আজ আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কীভাবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবো। আমি দেখতে পাই নেতা আসলে বিপুল স্লোগান হয়, সেলফি তোলার জন্য প্রতিযোগিতা হয়, কিন্তু সেই ছবি তুলে শুধু ফেসবুকে দেওয়া ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্য কাজ করতে আমি দেখি না।
নিজেকে আওয়ামী লীগের মাইকিং করা কর্মী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রায় ৭ কোটি মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন। প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়, তখন তার প্রতিবাদে আমাদের নেতাকর্মীদের যেভাবে সরব হওয়া দরকার, সেটি হতে দেখি না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার জন্য তরুণ নেতাদের অনুরোধ জানিয়ে ড. হাছান বলেন, গ্রামীণ জনপদে অনেক রাস্তাঘাট-কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে। সেখানে ১৩ বছর আগে কী ছিল, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কারণে আজ কী হয়েছে, সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের পরিচালনায় প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সংসদের চিপ হুইপ আবু সাঈদ মাহমুদ স্বপন, সংসদ সদস্য মোস্তফিজুর রহমান, নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও ওয়াসিকা আয়েশা খান।