মাদক ব্যবসায় ও ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তাণ্ডব চালিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তারা স্থানীয় একজন বাড়ির মালিককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
মনিরুল ইসলাম মনির নামের ওই ব্যক্তিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় আহত অন্তত ১০ জনকে আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) রাতে গাজীপুর মহানগরীর ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুনিয়া তারগাছ শিংরাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, রাত ৯টার দিকে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি হাবিব-আরিফের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শিংপাড়া গলি রাস্তায় অস্ত্রের মুখে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন গণহারে ছিনতাই করে। এ সময় পাশের বাড়ির মালিক মনিরুল ইসলাম মনির ও সাইফুল ইসলাম হাজারীর বাড়ির কয়েকজন ভাড়াটিয়াও ছিনতাই ও মারধরের শিকার হন। খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হাবিব, আরিফ, ইয়াসিনের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এলাকায় মহড়া দেয়। এসময় রাস্তায় যাকে পেয়েছে তাকেই পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে।
ঘটনার সময় বাড়ির মালিক মনিরুল ইসলাম মনির ও সাইফুল ইসলাম হাজারী শিংপাড়া গলির একটি দোকানের সামনে বসা ছিলেন। কিশোর গ্যাং সদস্যরা মনিরকে দোকানের সামনে ফেলে উপর্যপুরি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। একই সময় সাইফুল ইসলামকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে সন্ত্রাসীরা মনিরের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর চালায়।
সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে এলাকায় ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে সব দোকানপাট বন্ধ ও রাস্থাঘাট খালি হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই হামলাকারীরা স্থান ত্যাগ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘মাদকে এলাকার অলিগলি ছেয়ে গেছে। ঘর থেকে বের হলেই মাদক। পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে সব সময় জটলা বেঁধে থাকে মাদককারবারি কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এদের ভিড় ঠেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজে যায় ছেলেমেয়েরা। এতে সন্তানদের নিয়ে আমাদের সব সময় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়।’
আহত মনিরের স্বজনদের অভিযোগ, সন্ত্রাসী হাবিবুল্লাহ (২১) স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম দুলালের বাড়িতে থাকেন। তাই কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
এ ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘মাদক কারবারি বা কিশোর গ্যাং সদস্যদের কখনো আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। তবে হাবিবুল্লাহ একসময় আমার বাড়িতে নিয়মিত আসতো। শাকিল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমিই তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছিলাম। জেল থেকে বের হওয়ার পর আমি তাকে আর আশ্রয় দিইনি। বরং তাকে সংশোধনের জন্য বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু খারাপ তো খারাপই থেকে যায়।’
গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাটি খুবই রোমহর্ষক। আশপাশের বিভিন্ন বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।