সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন এক মা। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে টয়লেটের কমোডে সন্তান প্রসব করেন তিনি। বিষয়টি তিনি প্রথমে বুঝতে পারেননি। তবে তার সঙ্গে থাকা আত্মীয় কমোডে কিছু একটা পড়ে যেতে দেখেন। তিনি বলার আগেই ফ্লাশ করায় কমোডের ভেতর থেকে পাইপে ঢুকে যায় নবজাতক। এরপর পৌনে দুই ঘণ্টা চেষ্টার পরে পাইপ কেটে নবজাতককে উদ্ধার করেন তার বাবা। শনিবার (০৭ মে) দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের তৃতীয় তলায় প্রসূতি ওয়ার্ডে এমনই ঘটনা ঘটেছে।
নবজাতক ও তার মা সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, উদ্ধার করা নবজাতককে বিশেষ সেবা ইউনিটে (স্ক্যানু) ও তার মা প্রসূতি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, নবজাতকের বাবার নাম নেয়ামত উল্লাহ এবং মা শিল্পী বেগম। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার গণমান শেখপাড়া বাজার সংলগ্ন তাদের বাড়ি। সে পেশায় জেলে। তার চার বছর বয়সী আরও এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
নেয়ামত উল্লাহ বলেন, আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় প্রথমে তাকে স্বরূপকাঠি হাসপাতালে ভর্তি করাই। কিন্তু অবস্থা ভালো না দেখে তারা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। এখানে এনে ভর্তি করালেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। শেষে ডাক্তার সিজারিয়ানের সিদ্ধান্ত নেন। দুপুরে অপারেশনের ওষুধ কিনতে বললে আমি সেগুলো আনতে যাই। ওষুধ নিয়ে ফিরে এসে দেখি, টয়লেটে অনেক লোকজন ভিড় করে আছেন। আমার আত্মীয়-স্বজনরা কান্নাকাটি করছেন।
তিনি বলেন, লোকজন বলাবলি করছিল আমার স্ত্রী টয়লেটেই সন্তান প্রসব করেছে। হাসপাতালের একজন আমাকে টয়লেটের মধ্যে হাত দিতে বলেন। আমি পুরো হাত ঢুকিয়ে দিয়েও কিছু পাইনি। কান দিয়ে শুনি টয়লেটের পাইপের মধ্য থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। হাসপাতালের লোকজন বলেছেন, ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়েছে। আমি অপেক্ষা করিনি। কারণ মেয়ে পড়েছে আমার। আমাকেই তাকে বাঁচাতে হবে। কারও অপেক্ষা না করে দ্রুত দোতলায় গিয়ে টয়লেটের পাইপ ভেঙে আমার সন্তানকে তার মধ্য থেকে বের করে নিয়ে আসি।
তিনি আরও বলেন, কমপক্ষে পৌনে দুই ঘণ্টা মেয়েটি টয়লেটের পাইপের মধ্যে ছিল। কীভাবে বেঁচে ছিল? কীভাবে অত খানি গেল সেটাই বুঝতে পারছি না। তারপরও সবার কাছে দোয়া চাই যেন আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে বড় হয়।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী বলেছে সে প্রসব বেদনায় বিষয়টি টেরই পায়নি। কখন টয়লেটের কমোডে সন্তান প্রসব হয়ে গেছে। তার সঙ্গে আমার এক আত্মীয় ছিল। তিনি না দেখলে হয়তো আমার মেয়েকে আর পেতাম না।
প্রত্যক্ষদর্শী রুবেল বলেন, ঘটনার পর পুরো হাসপাতালে জানাজানি হয় টয়লেটের পাইপে শিশু পড়ে গেছে। আমরা বিশ্বাসই করতে পারিনি।
নেয়ামত উল্লাহর স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, আমার সন্তানকে আল্লাহ নিজে বাঁচিয়েছেন। সবার কাছে দোয়া চাই যেন আমার মেয়ে ভালো থাকে, সুস্থ থাকে।
নেয়ামত উল্লাহর ভাই মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। সবার কাছে দোয়া চাই আমার ভাইয়ের মেয়ের জন্য।