রাজশাহীর কাটাখালীতে দুর্ঘটনার পর আগুনে পুড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসটিতে ছিলেন নারী ও শিশুসহ ১৮ জন। ওই মাইক্রোবাস থেকে আগুনে পোড়া ১১ মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এছাড়া আগুনে পোড়া ৬ জন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। তারাও ছিলেন ওই মাইক্রোবাসে।
স্বজনদের তথ্য অনুযায়ী যে ১৮ জন মাইক্রোবাসে ছিলেন তারা হলেন পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বড়রাজা রামপুর গ্রামের ব্যবসায়ী সালাহউদ্দিন (৩৬), তার স্ত্রী সামছুন্নাহার (২৮), ছেলে সাজিদ (৭), মেয়ে সাফা (৪), সামছুন্নাহারের বড় বোন কামরুন্নাহার (৪১), বড়মজিদপুর গ্রামের পার্টস ব্যবসায়ী ফুল মিয়া (৪০), তার স্ত্রী নাজমা (৩৫), মেয়ে সাবিয়া (৪), মেয়ে সুমাইয়া (৮), ছেলে ফয়সাল (১৩), রায়পুরের ডারিকাপাড়া গ্রামের মোখলেছার (৪৫), তার স্ত্রী পারভীন (৩৫), ছেলে পাভেল (১৯), থানাপাড়া এলাকার মাইক্রোবাসচালক হানিফ উদ্দিন (২৮), প্রজাপাড়ার তাজুল করিম (৪৫), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩৫), ছেলে ইয়াসিন (১৪), দুরামিঠিপুর দক্ষিণপাড়ার শহিদুল মিয়া (৪৫)।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র স্বজনদের বরাত দিয়ে জানান, এই ১৮ জন মাইক্রোবাসযোগে রংপুর থেকে রাজশাহীতে যাচ্ছিলেন। পদে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসটিতে আগুন ধরে যায়। এতে ১৮ জনের সবাই মারা যান।
তবে দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ। এদের মধ্যে ১১ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে মাইক্রোবাস থেকে। দুর্ঘটনায় ৬ জনকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৬ জনই মারা যান। তারা ছিলেন মাইক্রোবাসের যাত্রী। সেই হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১৭। ওই ১৮ জনের মধ্যে কার মরদেহ পাওয়া যায়নি তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, তারা মাইক্রোবাস থেকে দগ্ধ ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। মরদেহগুলো পুড়ে গেছে। সেগুলো শনাক্ত করা যায়নি। তারা মাথা গুনে গুনে মরদেহগুলো আলাদা করে রাখা হয়েছে।
এদিকে, স্বজন হারানোর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে রংপুরের পীরগঞ্জ। কান্নার রোল পড়েছে গ্রামে গ্রামে। চলছে সন্তানহারা মায়ের আহাজারি। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ পিতৃহীন ছেলেও। পীরগঞ্জের চার ইউনিয়ন এখন শোকবিহ্বল। মরদেহ গ্রহণ করতে রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পৌঁছান স্বজনরা।
বড়রাজা রামপুর গ্রামের নিহত সালাহউদ্দিনের চাচাতো ভাই নুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে স্ত্রী-তিন সন্তান ও স্ত্রীর বড় বোনকে নিয়ে মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীতে ঘুরতে যান সালাহউদ্দিন। ওই মাইক্রোবাসে আরও ১৩ জন যাত্রী ছিল। তারা সবাই পীরগঞ্জের বাসিন্দা।
তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ গ্রহণে তাদের পরিবারের তিনজন রাজশাহীতে গেছেন। মরদেহ শনাক্ত করে নিয়ে আসার পর দাফনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যদিকে বড়মজিদপুরে নিহত পার্টস ব্যবসায়ী ফুল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় কান্নার শোরগোল। পরিবারের উপার্জনকারী ফুল মিয়াকে অকালে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েছে পরিবার। ফুল মিয়ার মা বৃদ্ধা সাহিদা খাতুনসহ পরিবারের লোকজনদের আহাজারিতে কান্না করছে গ্রামের সাধারণ মানুষেরাও।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুর পৌনে ২টার দিকে রাজশাহীর কাটাখালীতে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে পীরগঞ্জ উপজেলার ১৮ জন নিহত হন। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের কাটাখালী থানার সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।