শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। বুধবার (২৭ এপ্রিল) জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠককালে সেনাপ্রধান বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। শান্তিরক্ষী মিশনসমূহে নারী শান্তিরক্ষীসহ আরও বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিয়োগ, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ, অন্যান্য শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ, বাংলাদেশ থেকে আর্মড পার্সোনেল ক্যারিয়ার মোতায়েন, গার্ড ইউনিটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নিয়োগ, জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি এবং অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বাংলাদেশ থেকে আরও অধিক সংখ্যক পুলিশ কন্টিনজেন্ট ও ইন্ডিভিজ্যুয়াল পুলিশ অফিসার (আইপিও) নিয়োগের আহ্বান জানান বাংলাদেশের সেনা প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের অত্যন্ত কঠোর নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মনোনীত করে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে মিশনে পাঠানো হয় বলে উল্লেখ করেন সেনা প্রধান। ভারপ্রাপ্ত মিলিটারি অ্যাডভাইজর বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব, নৈতিকতা এবং নিয়মানুবর্তিতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এসব কারণেই বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি সংখ্যক শান্তিরক্ষী নিয়োগে আগ্রহের কথা জানান তিনি।
এএসজি খালেদ খিয়ারি পিস বিল্ডিং কমিশন ও পিসকিপিং-এ বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। এছাড়া এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণ এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয়দানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। আলোচনা চলাকালে ভারপ্রাপ্ত মিলিটারি অ্যাডভাইজর এবং পলিটিক্যাল ও পিস বিল্ডিং অ্যাফেয়ার্স বিভাগের এএসজি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে একটি এভিয়েশন কন্টিনজেন্ট জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েনের অনুরোধ জানালে সেনাপ্রধান তাতে নীতিগত সম্মতি দেন।
শান্তিরক্ষী মিশনের বাংলাদেশি কন্টিনজেন্টসমূহে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি পরিবর্তন করে বাংলাদেশ থেকে নতুন অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি প্রতিস্থাপন করার জন্য সেনাবাহিনী প্রধান প্রস্তাব করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাতে সম্মতি প্রকাশ করেন। ফলে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এ বিষয়টির সমাধান হতে যাচ্ছে যা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সক্ষমতা, সুরক্ষা ও মনোবল বৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এএসজি ক্রিশ্চিয়ান স্যন্ডার্স বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পেশাগত দক্ষতা ও লজিস্টিক সক্ষমতার প্রশংসা করেন। তিনি বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশি হেলিকপ্টার কন্টিনজেন্ট নিয়োগসহ অন্যান্য শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সহায়তা প্রত্যাশা করেন। পুলিশ অ্যাডভাইজর লুইস রিবেরিও ক্যারিলহো শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত বাংলাদেশি পুলিশ সদস্যগণের প্রসংশা করেন এবং আরও অধিক বাংলাদেশি পুলিশ সদস্য নিয়োগের আগ্রহের কথা জানান। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর নামে স্থাপিত বেঞ্চ ও রোপণকৃত বৃক্ষ-হানি লুকাস্ট পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনী প্রধান।