অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিম ঈদুল ফিতরের পর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। উচ্চ আদালতে দণ্ড বহাল থাকায় ওই এমপিকে কারাগারে যেতে হবে। কারাগার থেকে তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে নিয়মিত আপিল করবেন। সেসঙ্গে জামিন আবেদনও।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছেন তার আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
২০২১ সালের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে ১০ বছরের দণ্ড বহাল থাকলেও তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি। একইসঙ্গে রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, অফিসিয়ালি রায়টা আজকে কমিউনিকেট হয়েছে। এটা এখন বিচারিক আদালতে যাবে। আমাদের ৩০ দিন টাইম দেওয়া হয়েছে। এ ৩০ দিনের মধ্যে কিছু সরকারি ছুটি আছে, সেগুলো ক্যালকুটেল করে। আমরা বিচারিক আদালতে সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) পিটিশন দেবো। ৩০ দিনের মধ্যে এটা আমরা দেবো। আমি আমার ক্লায়েন্ট (মক্কেল) সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি সবকিছু দেখে ঈদের পরই সারেন্ডর করবেন।
আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা আরও বলেন, ১০ বছরের কনভিকশন বহাল থাকায় সারেন্ডারের পর কারাগারে যেতে (হাজী সেলিমকে) হবে। এরপর সার্টিফাইয়েড অনুলিপি ও ওকালতনামা নিয়ে আপিল বিভাগে নিয়মিত আপিল করবো। সেসঙ্গে জামিনের দরখাস্ত করবো। উচ্চ আদালতে দুদক পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান, হাজী সেলিমের পক্ষে শুনানি করেছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী (প্রয়াত) আবদুল বাসেত মজুমদার ও আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তামান্না ফেরদৌস ও সাথী শাহজাহান।
রায় ঘোষণার দিন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, দুদক আইনে (২৬ এর ২ ধারা) করা মামলায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত ৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। সেই অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় হাজী সেলিমকে তথ্য গোপনের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, দুদক এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।
কিন্তু দুদক আইনের ২৭ (১) ধারা অনুসারে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। ওই অভিযোগে তার সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশের রায় দিয়েছেন। এরপর বিচারিক আদালত যেদিন হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাবেন, সেদিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। আর আত্মসমর্পণ না করলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে বলা হয়েছে। আর যেসব সম্পত্তি নিয়ে এ সাজা দেওয়া হয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিতে হবে।