সড়কে অব্যবস্থাপনার কারণে বছরে মোট ক্ষতি এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ৭০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। যা জিডিপির দুই শতাংশ। এছাড়া শুধু ঢাকায় ট্রাফিক জ্যামের কারণে বার্ষিক এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। যা জিডিপির তিন শতাংশ। গতকাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিট (এআরআই) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ টেকনিকস ফর ট্রান্সপোর্টেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড সেফটি ২০২২’ শীর্ষক ষষ্ঠ প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ প্রদান উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উদ্ধৃত করে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এআরআই তাদের গবেষণা থেকে জানায়, সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
যেমন ২০২০ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ছিল সাড়ে ২২ শতাংশ। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২০ সালে পথচারী মৃত্যুর হার ছিল ২৯ দশমিক ৯। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৬ শতাংশে। সামগ্রিক বিবেচনায় আগের বছরের তুলনায় ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৭ সালে রাইড শেয়ারিংয়ের একটা নীতিমালা তৈরি করা হয়। তারপর গত পাঁচ বছরে ঢাকা শহরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। পুরো যুক্তরাষ্ট্রেও ১০ লাখ মোটরসাইকেল চলে না। অনুষ্ঠানে এআরআইর পরিচালক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, দেশে এখন ৩২ লাখের মতো মোটরসাইকেল নিবন্ধিত আছে। অর্থাৎ গণপরিবহনের যে কথা আমরা বলছি, সেই ভারসাম্য এখন আর নেই। অবকাঠামোগত দুর্বলতা থাকার পরও কিছু নীতিগত দুর্বলতা হুটহাট করে নিয়ে ফেলছি।
এটা অনেকটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হয়ে যাচ্ছে। ঈদযাত্রার বিষয়ে মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ সক্ষমতা আছে, তার দ্বিগুণ মানুষ এবার ঈদযাত্রায় বাড়িতে যাবে। কাজেই সড়ক ব্যবস্থাপনা কোমায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যাদের কাজ নেই, তারা ২৭শে এপ্রিলের আগেই বাড়ি চলে যায়। ঈদের সময় দুর্ঘটনা ৪০-৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। কারণ, সড়কে চাপ বাড়লে দুর্ঘটনা বাড়বে। বুয়েটের সহ-উপাচার্য আবদুল জব্বার খান বলেন, আমরা ইদানীং খুব জোরেশোরে শুনছি, ২৩৮ কিলোমিটার সাবওয়ে হবে। ৩০ বছরে ৩টি ধাপে এই সাবওয়ে করা হবে। এতে ব্যয় করা হবে ৬৫ বিলিয়ন ডলার। আমাদের পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ বিলিয়ন ডলার। আমরা যে সাবওয়ের কথা চিন্তা করছি, এখনকার প্রাক্কলিত ব্যয় হিসেবে এই টাকা দিয়ে ১৬টি পদ্মা সেতু করা যাবে। এর ব্যয় আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে।’ এত টাকা ব্যয়ে সাবওয়ে নির্মাণ ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আবদুল জব্বার খান বলেন, ‘৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৯ লাখ কোটি টাকা দেশের বর্তমান বাজেটের প্রায় দেড় গুণ। যদিও এটা ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হবে, তবু চিন্তার বিষয় থেকেই যায়। কারণ, আমাদের মাথাপিছু ঋণ এর ফলে কতটুকু বাড়বে, সেটিও বিবেচনার মধ্যে আনার প্রয়োজন আছে।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, আমরা গবেষণা সংক্রান্ত প্রকল্প খুব একটা পাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ প্রকল্প আসে অবকাঠামো নির্মাণের।
’ পরিবহনসহ নানা খাতে গবেষণাবিষয়ক প্রকল্প নিয়ে আসার প্রস্তাব দেন তিনি। বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রকাশ মজুমদার বলেন, দুর্ঘটনা যেন না হয়, তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। দুর্ঘটনা এড়াতে ফুটপাথ ব্যবহার করাসহ ট্রাফিক আইন মেনে চলার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এআরআইর সহকারী অধ্যাপক আসিফ রায়হান। এতে ‘বঙ্গবন্ধু’স ভিশন ফর রোড সেফটি প্রমোশন: পলিসি ল্যাপস-গ্যাপস অ্যান্ড মুভিং টুয়ার্ডস ডিজাইনিং ইনটারভেনশন’ শীর্ষক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন এআরআইয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার। অনুষ্ঠানে তিন ক্যাটাগরিতে সেরা তিন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- ‘প্রপোজাল রাইটিং’- এ বিজন হালদার জয়, ‘কোশ্চেনেয়ার ডিজাইন’- এ মিজানুর রহমান এবং প্রেজেন্টেশন- রত্না খাতুন। ২০১৬ সাল থেকে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বুয়েটের ‘অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)’ চার মাস মেয়াদি এই ট্রেনিং প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছে।