আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের। সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের শেষ দিকে কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু এর আগেই আগামী বছরের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করতে যাচ্ছেন আবদুল হামিদ। প্রসঙ্গত, তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আবদুল হামিদের আবারও রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধানের ৫০ (২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘একাধিক্রমে হউক না হউক—দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না।’ ফলে সংসদ নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস আগেই, অর্থাৎ আগামী বছরের ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন কারো শপথ নেওয়ার কথা। পরবর্তী রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। ফলে আগামী বছরের শুরুতেই সবার দৃষ্টি থাকবে ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে। যদিও পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নিয়ে এখনই রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
এক নজরে আবদুল হামিদ: এর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম ও প্রথম মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন আবদুল হামিদ। মরহুম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর তখন স্পিকার আবদুল হামিদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় মেয়াদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার পর শুধু ১৯৯১ সালেই রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন হয়েছিল। এরপর সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে তাকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, যেটি বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম) আসন। এছাড়া দীর্ঘ ৩৭ বছর কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকে তার ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।
আবদুল হামিদ সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১২ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের ১ নভেম্বর থেকে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মত স্পিকার হন। আবদুল হামিদ তিন পুত্র ও এক কন্যার জনক। বিভিন্ন দেশের সংবিধান ও ইতিহাসগ্রন্থ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি সংকলিত পুস্তক পাঠ করা তার শখ।