গুম হওয়া মানুষের স্বজনদের কান্না শোনার যেন কেউ নেই। স্বজনরা জানতেও পারেননি তারা জীবিত নাকি মৃত। বুকভরা বেদনা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন তারা। দশ বছর ধরে সিলেটের গুম হওয়া চার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রোববার ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইমজা মিলনায়তনে সিলেট মহানগর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়ে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে কাঁদলেন, কাঁদালেনও। এতে করে অনুষ্ঠানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সিলেট মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় ব্যতিক্রমী এ প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন- মা-বাবা, ভাইবোন, সন্তান, কারও স্ত্রী তাকিয়ে থাকেন দরজার দিকে। হয়তো কখনো কেউ ফিরে এসে দরজার ওপার থেকে ডাক দেবে প্রিয় নাম ধরে। অপেক্ষায় রাত পেরিয়ে ভোর হয়, ফিরে না প্রিয়জন।
পরিবারের স্বপ্ন ছিল যাকে ঘিরে, সেই মানুষটিই গুম হয়ে গেছে। বিএনপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর বিশ্বস্ত সহচর ও গাড়িচালক আনছার আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগম অনুষ্ঠান স্থলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবেগতাড়িত হওয়ায় বক্তব্য দিতে পারেননি তিনি। সাবেক ছাত্রদল নেতা জুনেদ আহমদের বোন তানজিনা খানম আজও তার ভাইয়ের সন্ধান দাবি করে বলেন- আমাদের ভাইয়ের স্থানে আপনারা নিজেদের দাঁড় করিয়ে উপলব্ধি করলেই বুঝতে পারবেন কীভাবে কাটছে স্বজনহারাদের প্রতিটি মুহূর্ত। আমাদের মতো গুম হওয়া পরিবারের সময় কাটছে কত কষ্ট আর যন্ত্রণায়। গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের পিতা ডা. মঈন উদ্দিন আহমদ মনের ভেতরে জমানো দীর্ঘ ১০ বছরের ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন- দুঃখ কার কাছে বলবো। দুঃখ বলার জায়গা নেই। মনের ভেতর শুধু বোবা কান্না। নিজের ছেলে গুম হওয়ার পর সকল তথ্য সংগ্রহ করে একটি দলিল প্রস্তুত করে রাখেন তিনি।
সেই দলিল অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থাপন করে বলেন, সিলেটের গুম হওয়া সকল ব্যক্তির এভাবে একটি দলিল প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। এ জন্য সিলেট বিএনপি নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ডা. মঈন উদ্দিন। সভাপতির বক্তব্যে সিলেট মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী বলেন- সারা দেশে গুম হওয়া মানুষগুলোর পরিবারের সদস্যদের প্রশ্ন কোথায় আছেন তাদের প্রিয় মানুষটি। অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেয়া হোক তাদেরকে। সিলেট মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, গুম- খুনের কথা যাতে কেউ বলতে না পারে সেজন্য বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এবং জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র চলছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত সিলেট মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, এড, হাবিবুর রহমান হাবিব. সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, এড. রোকসানা বেগম শাহনাজ, আজমল বখত সাদেক, নজিবুর রহমান নজিব ও সালেহ আহমদ খসরু, সদস্য আমির হোসেন, মাহবুব কাদির শাহী, মোর্শেদ আহমদ মুকুল, নুুরুল আলম সিদ্দিকী খালেদ, আবুল কালাম ও ডা. নাজমুল ইসলাম, সিলেট মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি ইউনুছ মিয়া, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী আহসান প্রমুখ।