নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। রোববার (১৭ এপ্রিল) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেন এ আদেশ দেন। গত ১১ এপ্রিল আশিষ রায়কে আদালতে হাজির করতে কারাকর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। সেই মোতাবেক আজ তাকে আদালতে হাজির করেন কারা কর্তৃপক্ষ। পরে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
এদিকে এদিন আশিষ রায়ের জামিন আবেদন করা হয়। তার পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী নজিবউল্যাহ হিরু জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ২০০৫ সালের ২৩ মে আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত ছিল। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর মামলার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। এরই মধ্যে গত ২৪ মার্চ আসামি বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেই বিষয়ে আসামিকে জানানো হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ থাকায় আইনজীবীর সঙ্গে তেমনভাবে যোগাযোগও করা হয়নি। বিষয়টি আইনজীবীও জানেন না। এটা ভুল হয়েছে। তাই আসামির জামিনের প্রার্থনা করছি। ’
এ সময় বিচারক বলেন, প্রত্যেকের (আসামির) ঠিকানায় নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষে জামিননামাও দিয়েছে। উচ্চ আদালতে আদেশ অবহেলা রয়েছে। তাই আসামির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হলো। গত ৬ এপ্রিল সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার জব্দ হওয়া আলামত উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মোতাবেক গোয়েন্দা পুলিশ আজ জব্দ হওয়া আলামত আদালতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পী।
আগামী ২৫ এপ্রিল মামলাটির পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। মামলার আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আদনান সিদ্দিকী ও ফারুক আব্বাসী।
বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই বছরই এক আসামি মামলা বাতিলে হাইকোর্টে আবেদন আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সাল থেকে দীর্ঘ ১৯ বছর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটি স্থগিত ছিল৷ ২০১৫ সালে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। তারও সাত বছর পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার নথি বিচারিক আদালতে ফেরত এলে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।