বিদেশে বসবাসরত নাগরিকদের দেশীয় ব্যাংকে অর্থ জমার আহ্বান জানিয়েছে নেপাল। শ্রীলঙ্কার মতো যাতে অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে না হয়, সেজন্য প্রবাসীদের সহায়তা কামনা করেছে দেশটি। শনিবার নেপালের অর্থমন্ত্রী জনার্দন শর্মা বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এখনও পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে এবং কোনো সমস্যা নেই। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে আলাপকালে দেশটিতে নিত্য-পণ্যের দাম বাড়লেও নেপালের অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারির ধকল সামলে দেশটির রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস পর্যটন খাতকে সরকারের ঘুরে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টার মাঝে নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়তে শুরু করেছে নেপালে। চীন এবং ভারত সীমান্তের নেপালে মূলধনের লাগাম টানতে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৮ শতাংশের বেশি কমে ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে দেশটির ছয় মাস আমদানি ব্যয় বহন করা যাবে।
শর্মা বলেছেন, প্রবাসে বসবাসরত নেপালিরা দেশে সঞ্চয় জমা করার মাধ্যমে ব্যাংকে ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদ সুবিধা পাবেন। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি সঙ্কটের মুখোমুখি হয়নি এবং নেপালের পরিস্থিতিকে শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনা করা যাবে না।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা গত কয়েক দশকের মধ্যে এবারই প্রথম নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি এবং জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসায় দেশটিতে গত কয়েক সপ্তাহ সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।
নেপালের মোট অর্থনীতির প্রায় এক চতুর্থাংশের সমান রেমিট্যান্স পাঠান বিদেশে বসবাসরত কর্মীরা। গত বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে চলতি বছরের মধ্য মার্চ পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রবাহ প্রায় ৩ শতাংশ কমে ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। কিন্তু এক বছর আগে একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
নেপালের রাজস্ব আয়ের গুরুত্বপূর্ণ খাত দেশটির পর্যটন শিল্প। ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর পর্যটন শিল্পে ব্যাপক ধস শুরু হয়। পর্যটন শিল্প ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও এখনও তা মহামারি-পূর্ব পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে পারেনি।
শর্মা বলেছেন, বিদেশে বসবাসরত ১ লাখ নেপালি নাগরিক যদি নেপালের ব্যাংকে ১০ হাজার মার্কিন ডলার সঞ্চয় করেন তাহলে এটি বর্তমান তারল্য সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে।
দেশটির এই মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৬৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা এবং বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে দেড়শ মিলিয়ন ডলার সফট লোন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেপাল। আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্র নেপালকে অফেরতযোগ্য এই অনুদান দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।