রেজওয়ানা চৌধুরী বৃষ্টি। কখনো সোহা চৌধুরী নামেও নিজেকে পরিচয় দেন ত্রিশোর্ধ্ব এই নারী। তার মায়ের নাম কেয়া চৌধুরী। এক সময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করলেও তিনি কখনো এমপি ছিলেন না। বর্তমানে নেই তার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। কিন্তু মায়ের নামের সঙ্গে মিলের কারণে নিজেকে সাবেক একজন এমপি’র মেয়ে পরিচয় দিয়ে খুলে বসেছিলেন ভয়ঙ্কর প্রতারণার দোকান। বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে মোবাইল বিক্রেতা, কাপড় বিক্রেতা, সবজি বিক্রেতা, মাছ বিক্রেতা, ভাঙাড়িওয়ালা থেকে শুরু করে প্রত্যেকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এ ঘটনায় একাধিক মামলা হলে প্রতারক বৃষ্টি পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে এমনই ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন।
এ সময় মাছের এবং কাঁচাবাজারের টাকা চাইলে অভিযুক্ত প্রতারক কেয়া চৌধুরী, তার মেয়ে বৃষ্টি ও তাদের বাসার কাজের মেয়ে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়। বলে, তুই আমার বাসার কাজের মেয়ের শরীরে হাত দিয়েছিস। এ সময় তার কাছে উল্টো এক লাখ টাকা দাবি করে এবং তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে। এ সময় লাঠি, ছুরিসহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে মারতে আসে। পরবর্তীতে বিকাশের মাধ্যমে ১২ হাজার টাকা তুলে এনে প্রতারক কেয়া চৌধুরী এবং বৃষ্টিকে দিলে সেখান থেকে ছাড়া পান ওই ব্যক্তি। সেখানে থাকা অবস্থায় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে সাহায্য চাইলে ফোন কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলার ভয় দেখায়। এ সময় কৌশলে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে পরবর্তীতে তার নামে একটি প্রতারণার মামলা করেন। একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন একজন তরুণ মোবাইল ক্রেতা। অনলাইনে কেয়া চৌধুরী এবং বৃষ্টি মোবাইল ল্যাপটপ বিক্রি করবে বলে একটি পোস্ট দেয়। এ সময় ভুক্তভোগী তরুণ পুরাতন ল্যাপটপ, ফোন ক্রয় করতে আগ্রহী বললে তখন ১০ হাজার টাকায় বিক্রয় করার কথা চূড়ান্ত হয়। এ সময় তারা আদাবরের বাসায় ল্যাপটপ এবং পুরোনো ফোন নিতে গেলে প্রথমে ১০ হাজার টাকা নিয়ে বাসার দ্বিতীয় তলায় চলে যায়।
এভাবে রাত ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর টাকা এবং ফোন কোনোটাই না দিতে কালক্ষেপণ করে এবং হেনস্তার চেষ্টা করে। এ সময় সেখান থেকে বেরিয়ে ৯৯৯-এ ফোন দেয়ার পর পুলিশ প্রতারক বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করলেও তার মা কেয়াকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এই ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে বৃষ্টির মা কথিত এমপি কেয়া চৌধুরী। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতারক কেয়া বিদেশে পড়ালেখা করেছে বলে দাবি করে। আদাবরের বাসাটিতে দীর্ঘদিন ধরে মা-মেয়ের প্রতারণার কাজ চলছে। প্রতারক বৃষ্টির দুই ভাই একই বাসায় থাকলেও প্রতারণার বিষয়টি জেনেও তারা এ বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেন না। প্রতারক বৃষ্টি নিজেকে এমপির মেয়ে, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি, সচিব, আমলার আত্মীয় বলে বিভিন্ন সময় দাবি করেন। মাছ, মিষ্টি, কাপড়, ভাঙারিসহ বিভিন্ন জিনিসের অর্ডার দিয়ে কৌশলে বাসায় নিয়ে আসার পর টাকা তো দেয় না বরং তাদেরকে জিম্মি করে বিভিন্ন সময়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। জানা গেছে, প্রতারণায় অভিযুক্ত রেজওয়ানা চৌধুরীর মা কেয়া চৌধুরী এক সময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করলেও বর্তমানে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন। এছাড়া তিনি কখনো এমপি ছিলেন না। এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবার থানার উপ-পরিদর্শক মো. বাসার বলেন, প্রতারক মা এবং মেয়ের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে। গত দুই মাস আগে দুটি এবং সম্প্রতি প্রতারণার অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়েছে। পুলিশি হেফাজাতে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে মা-মেয়ের প্রতারণার ভয়ঙ্কর চিত্র। প্রতারক বৃষ্টির মা কথিক সংসদ সদস্য কেয়া চৌধুরী এ ঘটনায় পলাতক রয়েছেন। ওদিকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নিজের নাম জড়িয়ে খবর প্রকাশ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট কেয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, কোনো যাচাই-বাছাই না করে এমন সংবাদে তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরণের বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে।