টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার চাপাইত গ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পিনা নেকলা। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। বাবা উদাস চিসিম কৃষিকাজ করে সংসার চালান; যা আয় করেন তা দিয়ে তাদের সংসার ভালোভাবে চলে না। পিনা নেকলার ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। সেই ইচ্ছা থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ১২০ টাকা জমা দিয়ে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে আবেদন করেন। তবে বিনা ঘুসে চাকরি হবে তিনি কখনো কল্পনাও করেননি।
শনিবার রাতে টিআরসি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন। পরে তাকেসহ ১০০ পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশের আয়োজনে পুলিশ লাইন্স মাল্টিপারপাস শেডে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। শুধু তিনি নন, তার মতো টাঙ্গাইল জেলার ৮৭ জন পুরুষ ও ১৩ নারীর সরকারি নির্ধারিত ফি ১২০ টাকার বিনিময়ে চাকরি হয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ১০০ পদের বিপরীতে ৩ হাজার ৭২২ জন আবেদন করেছিলেন। ২০ মার্চ থেকে যাচাই-বাছাই শুরু হয়। বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে শনিবার রাতে লিখিত ও মনোস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার তাদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল টেস্ট করা হবে। পরবর্তীতে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে চূড়ান্ত মেডিকেল টেস্ট করিয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো হবে।
ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- নিয়োগ বোর্ডের সদস্য গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন, ঢাকা রেঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার সাজিদুর রহমান, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরফুদ্দীন আহমেদ প্রমুখ। পিনা নেকলা বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল পরিবার, সমাজ ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। সেই ইচ্ছা থেকে পুলিশে আবেদন করি। অনেকের কাছে শুনেছি ঘুস ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় না। তবে ঘুস ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় তার প্রমাণ আমি নিজে। আগামীতে দেশের স্বার্থে মানুষের সেবা করার জন্য সবার দোয়া চাই।
পিনা নেকলার মতো পুলিশ সদস্য পদে চাকরি পেয়েছেন সদর উপজেলার শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন, অনেকেই বলতো পুলিশের চাকরি পেতে লাখ লাখ টাকা ঘুস লাগে। তারপরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে আবেদন করার পর নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি। আমি যে রকম বিনাপয়সায় চাকরি পেয়েছি, সেরকম আমিও টাকা ছাড়া মানুষকে সেবা দেব। এজন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করছি।
শাকিলের মা সাহিদা বেগম বলেন, খুব কষ্টে মানুষ হওয়া আমার ছেলেটি পুলিশের চাকরি পেয়েছে। এতে আমি খুব খুশি। আমার শাকিল যাতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে এজন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা করি। নাগরপুরের মোকনা গ্রামের আরিফ হোসেন বলেন, গত মাঠেও আমি ওয়েটিং লিস্টে ছিলাম। এবার চাকরি পাওয়ায় আমি খুবই খুশি। সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়া আমার একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি। গতবার ভেবেছিলাম ঘুস না দেওয়ায় হয়তো আমার চাকরি হয়নি। এবার চাকরি পাওয়ার পর প্রমাণ হলো পুলিশের চাকরিতে কোনো প্রকার ঘুস লাগে না।
সখীপুরের লাবণ্য সরকার বলেন, পরিবারের হাল ধরতে আমার একটি চাকরি খুব প্রয়োজন ছিল। পুলিশের এই চাকরিটি আমার জন্য অনেক উপহার হয়েছে। এখন পরিবারের পাশাপাশি দেশের মানুষের পাশেও দাঁড়াতে পারব। পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, আইজিপির উদ্যোগে সম্পূর্ণ নতুন নিয়মে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, শুধু টাঙ্গাইল জেলা নয়, সারা দেশেই পুলিশ সদস্য নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। মেধার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকেই প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত যোগ্য প্রার্থীদের কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন এবং দালাল চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধও করা হয়েছে।