করোনা পরিস্থিতি একটু ভালো হওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে শুরু করেছে। করোনার শুরুতে রপ্তানি যেমন কমে গিয়েছিল, অন্যদিকে আমদানিও ব্যাপক হারে কমে গিয়েছিল। তাতে কমে এসেছিল বাণিজ্য ঘাটতি। সম্প্রতি আবার বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম আট মাস জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩০ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাণিজ্য ঘাটতি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, রপ্তানি আয় যেভাবে বাড়ার কথা, সেভাবে বাড়েনি। করোনার কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের চাহিদা অনেক কমে গেছে। করোনার সময় আমদানি ব্যয় কমলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্র‚য়ারি পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩০ শতাংশ আর আমদানি বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। আলোচিত সময়ে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে ৩ হাজার ২০৭ কোটি ডলার। পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৪৩৮ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ২ হাজার ২৩০ কোটি ডলার।
সেবাখাতেও বেড়েছে ঘাটতি আলোচিত আট মাসে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬১৪ কোটি ডলার। আর এ খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ৮৬৪ কোটি ডলার। সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৭৩ কোটি ডলার। আলোচ্য আট মাসে (জুলাই-ফেব্র‚য়ারি) দেশে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, যা ছিল আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ কম। আলোচ্য সময়ে নিট এফডিআই ছিল ২৫৩ কোটি ডলার।
উল্লেখ্য, রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যেটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি। আর চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তভুর্ক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
চলতি হিসাবে বিদেশ থেকে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা আসে, সেখান থেকে বিদেশে চলে যাওয়া অংশটুকু বাদ দিয়ে ব্যালান্স হিসাব করা হয়। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্স, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগসহ (এফডিআই) অন্যান্য উৎসের লেনদেন হিসাব-নিকাশ করে সার্বিক হিসাব প্রস্তুত করা হয়। মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার প্রভাব সরাসরি পড়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ওপরও। এফডিআই কমেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে নিট এফডিআই বলা হয়।