বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস আজ। ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। এবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আওয়ার প্ল্যানেট, আওয়ার হেলথ’ (আমাদের গ্রহ, আমাদের স্বাস্থ্য)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী পরিবেশগত কারণে প্রতি বছর ১৩ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে। জলবায়ু সংকট মানব স্বাস্থ্যের জন্যও বর্তমানে একক বৃহত্তম হুমকি। তাই জলবায়ু সংকটও স্বাস্থ্য সংকট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রামক এবং অসংক্রামক সব ব্যাধির জন্যেই বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী। একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের মানসিক প্রশান্তি নষ্ট হচ্ছে, বাড়ছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। ফলে দীর্ঘমেয়াদি আবার বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ বাসা বাধছে আমোদের শরীরে। ফলে মানব স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে আমাদেরকে পৃথিবীর স্বাস্থ্যের দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। পৃথিবী ভালো থাকলে, পৃথিবীতে বসবাস করা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী এবং জীববৈচিত্র্যও ভালো থাকবে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালযয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ ও ইনফোরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোমেন রায়হান বলেন, অমাদের সব থেকে আগে বায়ু দূষণের বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে যে, আমরা বায়ু দূষণে ঢাকা শীর্ষে অবস্থানে চলে যাচ্ছে। বায়ু দূষণের সঙ্গে হৃদ রোগ, হাইপার টেনশন, শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে।
বায়ু দূষণের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বায়ু দূষণের অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে রাস্তাঘাটের ট্রাফিক জ্যাম। যানবাহন জ্যামে পড়লে যে তেল পুড়ে, তাতে পরিবেশ দূষণ বাড়ে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সুশৃঙ্খল আনা জরুরি। আরেকটা কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বা অবকাঠামো নির্মাণ। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলবে, কিন্তু তার জন্য আলাদা একটা সময় নির্ধারণ করা উচিত। কোন সময় এসব কাজ করলে পরিবেশ দূষণ কম হয়, সেসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত।
উষ্ণায়ন বৃদ্ধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানি বিষয়ে আমাদের একটা উদ্বেগ রয়েছে। ঢাকার মানুষ ফুটানো ছাড়া পানি পান করতে পারে না। আমাদের ওয়াসার পানি যদি পান করার উপযুক্ত হত, তাহলে এই পানি কিন্তু আর ফুটানোর প্রয়োজন হতো না। পানি ফুটানোর কারণে আমরা বিশেষ করে ঢাকা শহরের মানুষেরা উষ্ণায়ন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছি। পানি ফুটানোর জন্য আমরা জ্বালানি গ্যাস বা যাই ব্যাবহার করি, তাতে বাতাসে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে। এতে উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে। আবার পানি ফুটালে যে বাষ্প তৈরি হয়, সেটাও উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। এসব বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। ওয়াসারা পানের উপযোগী পানি সরবরাহের মাধ্যমেও আমরা কিছুটা হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে পারি।
এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, উন্নয়ন কাজ করলে ধুলা, বালি, বায়ু দূষণ হবেই, তবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এসব কাজের ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কাজ করা হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কোন কাজ, কোন সময় করতে হবে, কোন কাজ করা উচিত, কোনোটা করা উচিত নয় সেসব বিষয়ে পরামর্শ দেন। আমাদের দেশে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয় না।
দূষণ কমাতে করণীয় জানতে চাইলে এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং বায়ু দূষণরোধে আমাদের সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, পাশাপাশি তা প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নের দিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত। সব কিছু জনগণের ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। এটা নীতি নির্ধারণের বিষয়। যারা এসব বিষয় বাস্তবায়ন করবেন, তারা আরও বেশি মানবিক হবেন এবং আমাদেরকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখারা চেষ্টা করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।