বিসিক সূত্র জানায়, ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদন করছেন ৩৭ হাজার ২৩১ জন চাষি। মাঠের লবণ উৎপাদন, সংগ্রহ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিযুক্ত আছেন আরও প্রায় এক লাখ শ্রমজীবী মানুষ। সাদা সোনার বাম্পার উৎপাদনে মহাখুশি চাষিরা। মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তরে কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী উপকূলে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে লবণের স্তূপ। চাষিরা পলিথিনের ওপর জমে থাকা লবণ সংগ্রহ করে পাশের জমিতে স্তূপ করে রাখছেন। কেউ কেউ লবণ ঝুড়িতে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন গুদামে। কেউ ফেলছেন মাটির গর্তে। ব্যবসায়ীরা মাঠ থেকে লবণ কিনে ট্রাকবোঝাই করে পাঠাচ্ছেন চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে।
বিসিকের দেওয়া তথ্যমতে, টেকনাফে লবণ চাষ হচ্ছে ৩ হাজার ৯৪৫ একর জমিতে। গত ২ এপ্রিল দুপুরে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙিখালী, খারাংখালী, উলুবনিয়া, দমদমিয়া, জাদিমুরা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে প্রায় দেড় হাজার একরে লবণের চাষ হচ্ছে। মাঠে পড়ে আছে লবণের বড় বড় স্তূপ। খারাংখালীর মনজুর আলম (৪৫) বললেন, বর্তমানে গরম বেশি হওয়ায় লবণও উৎপাদিত হচ্ছে বেশি। দামও গত মৌসুমের তুলনায় ৭০ থেকে ৯০ টাকা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, লবণের বাম্পার উৎপাদনে চাষিদের কপাল খুলে যাচ্ছে। অনেকে চাষের জমি বাড়াচ্ছেন। মহেশখালীতে এবার লবণ চাষ হচ্ছে ১৬ হাজার ১৮ একর জমিতে। মাঠে উৎপাদিত বেশির ভাগ লবণ কার্গোবোঝাই করে সমুদ্রপথে সরবরাহ করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায়।
বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, পলিথিন প্রযুক্তির প্রতি একরে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে ৩০ মেট্রিক টন করে। আর সনাতন পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয় ১০ মেট্রিক টন। লবণ উৎপাদনের জন্য প্রথমে মাঠ পরিষ্কার ও সমতল করতে হয়। তারপর লবণ পানি জমিয়ে রাখার জন্য সেই মাঠে ছোট বাঁধ দিয়ে চার কোনার একাধিক কক্ষ বানাতে হয়। তারপর মাঠে বিছানো হয় কালো পলিথিন। পরে বঙ্গোপসাগর কিংবা নাফ নদীর লোনা পানি ঢুকিয়ে সেই কক্ষ ভর্তি করা হয়। সূর্যের তাপে কক্ষের পানি শুকিয়ে তৈরি হয় লবণের আস্তর। পরে চাষিরা পলিথিনের ওপর থেকে সেই লবণ সংগ্রহ করে মজুত করেন। কালো পলিথিনে তাপমাত্রা বাড়ে বলে ৯৮ শতাংশ জমিতে কালো পলিথিন বিছানো হয়।
উপকূলজুড়ে বাম্পার লবণ উৎপাদনে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন জানিয়ে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানি হলে স্থানীয় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয় উৎপাদিত লবণ। চাষিদের এই দুরবস্থা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লবণ আমদানি বন্ধ রেখে স্থানীয়ভাবে লবণ উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে।