খাবারের দাওয়াত না দেওয়ায় শিক্ষককে লাথি মারার অভিযোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ (শরীয়তপুর) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকালে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. মহসিন মাদবর ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ উজ্জামান রাশেদের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়। এর আগে বুধবার (৩০ মার্চ) বিকেলে ওই কলেজের ৩০২ নম্বর রুমে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম সোহাগ বেপারী। তিনি ওই কলেজের কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। কলেজের শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা যায়, বুধবার (৩০ মার্চ) কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক সম্মান (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষা নিতে জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের দুজন বিশেষজ্ঞ ও একটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে কলেজের বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয় ও শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এই আয়োজনে ছাত্রলীগ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কেন ছাত্রলীগ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি, তা জানতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ বেপারী ও সাধারণ সম্পাদক রাশেল জমাদ্দার কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে বাংলা বিভাগে আসেন। সেখানে তারা বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষককে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে বলেন। তিনি তখন একটি অনলাইন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন ছাত্রলীগ নেতাদের। তখন সোহাগ বেপারী ওই শিক্ষককে লাথি ও কিল-ঘুষি মারেন। এ সময় অন্য শিক্ষকরা এসে ভুক্তভোগী শিক্ষককে উদ্ধার করেন।
অভিযুক্ত সোহাগ বেপারী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্যারদের সঙ্গে অন্য বিষয়ে কথা হয়েছে। তবে শিক্ষককে লাথি ও কিল-ঘুষি মারার অভিযোগ সত্য নয়। আমি কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারি। শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. মহসিন মাদবর বলেন, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ বেপারীর বিরুদ্ধে এক শিক্ষকের সঙ্গে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ (শরীয়তপুর) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ বেপারী ২০-২৫ জন কর্মী নিয়ে বাংলা বিভাগে আসে। আমাদের বলে, খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠানে তাদেরকে কেন দাওয়াত দেয়নি। এ নিয়ে আমার সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সোহাগ আমার বিভাগীয় প্রধান মো. ওয়ারেসুল আজমের সামনে আমাকে লাথি ও কিল ঘুষি মারে। বিষয়টি আমি অধ্যক্ষ স্যারকে ও শিক্ষক পরিষদের নেতাদের জানিয়েছি। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই মেনে নেব।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ বলেন, ছাত্রলীগের যে নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে সে আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী না। তাই তাকে বহিষ্কারও করতে পারছি না। বুধবার (৩০ মার্চ) রাতে শিক্ষক পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।