রাজধানীর সবুজবাগে গৃহবধূ তানিয়া আফরোজকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- এসি মেকার বাপ্পি, সুমন হোসেন হৃদয় ও রুবেল। হত্যাকাণ্ডের চারদিনের মাথায় তাদের গ্রেফতারের পর পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন হত্যাকারীরা এসি মেকার সেজে বাসায় ঢোকেন। এরপর ডাকাতি শুরু করলে তা দেখে ফেলায় গৃহবধূ তানিয়াকে প্রথমে বালিশ চাপা দেওয়া হয়। পরে তার মাথায় তিনটি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা।
ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথমে বাপ্পিকে ঝালকাঠি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রুবেল ও হৃদয়কে রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর পল্টন থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ।
তিনি বলেন, হত্যাকারীরা এসি মেরামতের নামে বিভিন্ন বাসায় গিয়ে ডাকাতি করতো। কোথাও বাধা পেলে হাত-পা বেঁধে কখনও হুমকি দিয়ে ডাকাতি সেরে পালিয়ে যেত। গত শনিবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় দুই শিশুকে বাসায় বেঁধে রেখে তাদের সামনে মা তানিয়া আফরোজকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, সবুজবাগ থানাধীন বেগুনবাড়ী মাষ্টারবাড়ি রোডের একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় স্ত্রী তানিয়া আফরোজ ও দিই শিশু সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকেন ময়নুল ইসলাম। তিনি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টেকনোলোজিস্ট পদে চাকরি করেন।
গত ২২ মার্চ ময়নুল ইসলাম কর্মস্থলে যান। ২৬ মার্চ বিকেল পৌনে ৪টার দিকে পূর্ব পরিচিত এসি মেকার বাপ্পী ও তার সহকর্মী সুমন হোসন হৃদয় ওই বাসার নিচে আসেন। তারা তানিয়াকে এসি সার্ভিসিং করা লাগবে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি ওই দুই জনকে নিয়ে দোতলায় নিজের বাসায় যান। সেখানে তারা এসি মেরামতের কাজ শুরু করেন।
ডিসি আব্দুল আহাদ জানান, বাসায় ঢুকে বাপ্পি ও হৃদয় আধঘণ্টা ধরে এসি মেরামত করতে থাকেন। একপর্যায়ে বাপ্পি নিচে নেমে জিআই তার নিয়ে আসেন। পাশাপাশি ফেরার সময় তার সহযোগী রুবেলকে নিয়ে বাসায় ঢোকেন। রুবেলকে দেখে তার বিষয়ে বাপ্পির কাছে জানতে চান তানিয়া। বাপ্পি তখন জানায় রুবেল তাদের সঙ্গে এসি মেরামতের কাজ করতে এসেছে। তানিয়া রুবেলকে একটি চেয়ারে বসতে দিয়ে ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
তিনি আরও জানান, বাসায় রান্নাবান্না আর কাজের ফাঁকে এসির কাজের তদারকি করতে থাকেন তানিয়া। একসময় দেখতে পান বাপ্পি ও রুবেল ঘরের আলমারি খুলে জিনিসপত্র এলোমেলো করছে। তখন তিনি জোরে চিৎকার দেন। এরপরই রুবেল তানিয়ার মুখ চেপে ধরে বালিশ চাপা দেয়। এসময় বাপ্পি তার ব্যাগে থাকা চাপাতি বের করে তানিয়ার মাথায় তিনটি কোপ এবং পিঠে একটি কোপ মারে। এতে নিস্তেজ হয়ে যান তানিয়া।
হত্যার এ দৃশ্য দেখে তানিয়ার মেয়ে মাইমুনা জাহান ও ১০ মাসের ছেলে তানভীরুল ইসলাম কান্নাকাটি শুরু করলে হত্যাকারীরা স্কচটেপ দিয়ে তাদের মুখ আটকে দেয়। পরে তাদের হাত-পা বেঁধে রাখে তারা। এরপর হত্যাকারীরা আলমারি থেকে টাকা স্বর্ণালংকার, তানিয়ার কানের দুল, মেয়ের গলায় থাকা একটি স্বর্ণের চেইন, টাকাপয়সা, মোবাইল ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চলে যায়। আব্দুল আহাদ বলেন, তারা মূলত বাসায় এসেছিল ডাকাতির উদ্দেশ্যে। এসি মেরামত করা তাদের শুধু একটি নাটক ছিল। এর আগে বাপ্পি এসি মেরামতের আড়ালে কয়েকটি বাসায় এমন টাকা পয়সা ডাকাতি করেছে বলে জানা গেছে।