এবারের রমজান সামনে রেখে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) দুই দফা ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ করবে। তবে, আগের ধারা পরিবর্তন করে প্রথমবারের মতো সদস্য কার্ড তৈরি করা হয়েছে। কার্ড ব্যবস্থার কারণে ফেনীতে টিসিবির নিয়মিত উপকারভোগীরা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ হতে বঞ্চিত হতে পারেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কার্ডধারীরা রমজান পর্যন্ত দুইবার নির্দিষ্ট পণ্য পাবেন। ফেনীর বড় বাজারে দোকান কর্মচারী রবি শাহ ও পলাশ মাহমুদ বলেন, অনধিক ১০ হাজার টাকার চাকরিতে পরিবার চলে অনেক কষ্টে। রমজানে টিসিবির পণ্যের কারণে খরচ সহনীয় ছিল। এখন আমাদের সুযোগ নেই। রমজানে অত্যাধিক মূল্যে শুকনো খাবার কেনা সম্ভব হবে না। এ রমজান হবে অসহনীয়।
আরেক দোকান কর্মচারী দুলাল হোসেন বলেন, জীবিকার কারণে নোয়াখালী থেকে ফেনী এসেছি ১৩ বছর আগে। সব সময় টিসিবির পণ্য কিনেছি সাশ্রয়ী মূল্যে। এখন আর আমাদের সুযোগ নেই। টিসিবির নতুন নিয়মে গ্রামীণ মানুষ উপকারভোগী হচ্ছেন। অর্থাৎ সরকারের ন্যায্যমূল্যের পণ্য সেবা গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে কার্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে। সাধারণত শহরাঞ্চলের সাধারণ মধ্যবিত্ত এর উপকারভোগী হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. আরিফ হোসেন বলেন, ‘ফেনীর গ্রামাঞ্চলের সাধারণ পরিবারগুলোর ব্যয়ের হার শহরের তুলনায় কম। এখনো মানুষ ঘরের আঙ্গিনা থেকে শাক-সবজি সংগ্রহ করে থাকে। বেশিরভাগ পরিবার পুকুর থেকে আমিষের চাহিদার কিছু অংশ মেটায়। সে তুলনায় শহরের নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন অনেক বেশি ব্যয়বহুল। এসব মানুষরা গ্রাম থেকে শহরে এসে উপকারভোগী হতে পারে না। একইভাবে শহরে এসে জাতীয় পরিচয়পত্রের কারণে পৌর ওয়ার্ডগুলো থেকে সরকারের দেওয়া সেবাগুলো হতে বঞ্চিত হয়। রমজান ঘিরে টিসিবির ন্যায্যপণ্য সরবরাহে সরকারের এ সিদ্ধান্ত শহরাঞ্চলে টিসিবির নিয়মিত গ্রাহকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, ‘কার্ডধারীরাই কেবল ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারবে। জেলার কোথাও যদি কার্ডধারী কেউ অনুপস্থিত থাকেন। সেক্ষেত্রে উপস্থিত অপেক্ষমানদের কার্ড ইস্যু করে পণ্য সরবরাহ করা হবে। ’
ফেনীতে পণ্য পাবে ৬১ হাজার পরিবার:
এবারের রমজান সামনে রেখে টিসিবির দুই দফা ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ করবে। তবে, আগের ধারা পরিবর্তন করে প্রথমবারের মত সদস্য কার্ড তৈরি করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, সদস্য কার্ড রমজান মাস উপলক্ষে করা হয়েছে। ফেনীতে কার্ডধারীর সংখ্যা ৬১ হাজার ৬২ পরিবার। প্রত্যেক উপকারভোগী প্রথম দফায় রোববার (২০ মার্চ) থেকে ৩০ মার্চ এর মধ্যে ন্যায্যমূল্যে তেল, চিনি, মসুর ডাল কিনতে পারবেন। দ্বিতীয় দফায় রমজান মাসে একবার ওই পণ্যসহ ২ কেজি ছোলা পাবেন। প্রথম পর্যায়ে ৪৬০ টাকায় প্রত্যেক কার্ডধারী ২ লিটার তেল, ২ কেজি চিনি ও ২ কেজি মসুরের ডাল কিনতে পারবেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার তেল ১১০ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, মসুরের ডাল ৬৫ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২ কেজি ছোলা যুক্ত করা হবে। যা প্রতি কেজি ৫০ টাকা করে বিক্রি করা হবে। সেক্ষেত্রে একজন গ্রাহক ৫৬০ টাকায় ওই পণ্য নিতে পারবে।
উপকারভোগী নির্বাচন প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বলেন, করোনাকালে আড়াই হাজার টাকা প্রণোদনাপ্রাপ্ত ৩৬ হাজার ২১৯ জনের তালিকা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে। এর বাইরে প্রত্যেক উপজেলা ও পৌর সংশ্লিষ্ট কমিটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় উপকারভোগী নির্বাচন করেছে। তিনি বলেন, সারাদেশে প্রধানমন্ত্রী এক কোটি মানুষকে টিসিবির পণ্যের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত রয়েছে। ফেনীতে টিসিবির পণ্য জেলার ২০ ডিলারের মাধ্যমে বিক্রির সক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।