রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) বিভিন্ন পদে নিয়োগে উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজের শ্যালক, দুই ভাই, স্ত্রীর ফুফাতো ভাই, চাচাতো বোন, গৃহকর্মী ও তার স্বামীকে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া নিয়োগের নীতিমালার লঙ্ঘন করে পদের চেয়ে বেশি জনবল নিয়োগ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
রুয়েটের রেজিস্ট্রার দফতর জানায়, ২০১৯ সালে তিনটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রুয়েটে বিভিন্ন পদে ১৩৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছরের ৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় ওই নিয়োগ সিন্ডিকেট সভায় পাস হয়। কিন্তু এখনও নিয়োগের রেজল্যুশন করা হয়নি। এদিকে চলতি বছরের জুলাইয়ে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যের এক ভাই লেবারুল ইসলাম আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন।
আরেক ভাই মো. মুকুল হোসেন সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছেন। শ্যালক সোহেল আহমেদ নিয়োগ পেয়েছেন পিএ টু ডিরেক্টর পদে। এছাড়া উপাচার্যের স্ত্রীর ফুফাতো ভাই মেহেদী হাসান কেয়ারটেকার পদে, চাচাতো বোন মাছুমা খাতুন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। উপাচার্যের বাসভবনের গৃহকর্মী লাভলী আরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এমনকি তার স্বামী এনামুল হককে উপাচার্যের গাড়িচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া লেবারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপাচার্য ও মুকুল হোসেন আমার আপন ভাই। আরেক ভাই মুকুলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মুকুলের সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে লেবারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যের চাচাতো বোন মাছুমা খাতুনের কাছে জানতে চাইল তিনি বলেন, উপাচার্য আমার কোনো আত্মীয় নন। উপাচার্যের বাসভবনের গৃহকর্মী লাভলী আরার কাছে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন রেখে দেন।
তবে উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখের দাবি, যথাযথ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। যোগ্যতা থাকায় তারা সবাই পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। সেই নিয়োগ বোর্ডেও তিনি ছিলেন না। জানতে চাইলে উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, যোগ্যতা থাকায় তারা সবাই পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। সেই নিয়োগ বোর্ডেও আমি ছিলাম না।
স্বচ্ছতার জন্য নিয়োগ পরীক্ষার খাতা কোডিং করা হয়েছিল, যাতে কোন প্রার্থীর খাতা কোনটি, তা যেন পরীক্ষক বুঝতে না পারেন। লেবারুল আপন ভাই। তবে সে আগে থেকেই রুয়েটে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে কর্মরত। সে আমার ভাই হিসেবে পদোন্নতি পায়নি। আলাদা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে সে পরীক্ষা দিয়ে জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছে। নিয়োগের রেজল্যুশন না করার ব্যাপারে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটে নিয়োগ অনুমোদন হয়ে গেছে। এটি রেজল্যুশনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এদিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ পদে নিয়োগের নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্যতা হিসেবে অনুমোদিত কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৌশলে ডিপ্লোমা ডিগ্রি চাওয়া হয়। কিন্তু সেই পদে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে রুয়েট শাখার ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতি গত ২২ জানুয়ারি এবং ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রুয়েট উপাচার্যকে লিখিত আপত্তি জানানো হয়।
এ ঘটনায় রায়হান ইসলাম নামের সংক্ষুব্ধ একজন চাকরিপ্রার্থী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, হাইকোর্ট এ বিষয়ে একটি আদেশ দিয়েছেন। সেটি এখনও রুয়েট কর্তৃপক্ষের হাতে এসে পৌঁছায়নি। নীতিমালা লঙ্ঘনের বিষয়ে উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন একজন প্রকৌশলী আবেদন করেছিলেন। তিনি আগে থেকেই রুয়েটে কর্মরত ছিলেন। নিয়োগ বোর্ড তাকে নিয়েছে।