‘বিতর্কিত ব্যক্তি’ মো. আমির হামজার স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) বাতিল করেছে সরকার। ব্যাপক সমালোচনার মুখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বছর সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য তার নাম মনোনীত হয়েছিল। শুক্রবার স্বাধীনতা পদকের সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এখন এতে নয় ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নাম আছে। বিতর্কিত একজনকে মনোনীত করার ঘটনায় কে বা কারা দায়ী, তা এখনো চিহ্নিত হয়নি। দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তাও স্পষ্ট নয়। উল্লেখ্য, দুই বছর আগে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার মনোনয়ন নিয়ে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। তখনও দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানা যায়নি।
২০২০ সালেও এমন একজনকে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারে মনোনীত করার পর সেটি বাতিল করা হয়েছিল। সেবারও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও তেমন কোনো পদক্ষেপের বিষয়ে জানা যায়নি। এ বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী যুগান্তরকে বলেন, অফিস খোলা হোক, পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয় আপনার জানতে পারবেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ১৫ মার্চ ১০ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। তাতে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয় প্রয়াত আমির হামজাকে। অচেনা এই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিতর্কের পর আমির হামজার লেখা ‘বাঘের থাবা’, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ ও ‘একুশের পাঁচালি’ নামে তিনটি বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে।
মরণোত্তর পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক আমির হামজার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট গ্রামে। ওই গ্রামসহ সারা জেলার মানুষের কাছে তিনি পালাগানের শিল্পী কিংবা কবি হিসাবে পরিচিত। এই আমির হামজা ১৯৭৮ সালে বরিশাট গ্রামে শাহাদত ফকির নামে একজন কৃষক এবং শিল্পী নামে আড়াই বছরের একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এ ঘটনায় তারা দুই ভাইসহ মোট ৬ জনের কারাদণ্ড হয়। আট বছর কারবাসের পর ৯১ সালের দিকে বিএনপি সরকার গঠন করলে মাগুরার মন্ত্রী মজিদুল হকের সহায়তায় বেরিয়ে আসেন তারা। ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ সাধারণ ক্ষমা পান আমির হামজাও। সর্বশেষ ২০০৭ সালেও স্থানীয় একটি গ্রাম্য মারামারির ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
আমির হামজার ছেলে আসাদুজ্জামান খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন। এ বিষয়ে আসাদুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি যুগান্তরকে জানান, তার বাবা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন ঘটনাটি সত্য। উল্লেখ্য, ২০২০ সালেও সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেটি বাতিল করেছিল সরকার। ওই বছর অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এসএম রইজ উদ্দিন আহম্মদকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। সেসময়ও দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।