সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া তার প্রতি সম্মান জানিয়ে আজ রোববার সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রথম জানাজা গতকাল বিকালে তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া ইউনিয়নের পেম গ্রামে। আজ রোববার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণস্থ জাতীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে শেষ জানাজা। বনানী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে তার মরদেহ সমাহিত করা হবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক বার্তায় এ শোক প্রকাশ করেন তারা। শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তারা।
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি মরহুম বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের রুহের মাগফিরাত কামনা ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শোক প্রকাশ করেছে। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। শোকবার্তায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রয়াত প্রেসিডেন্টের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএনপি। শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। শোকবার্তায় সাহাবুদ্দীন আহমদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, মহান আল্লাহ যেন তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এ ছাড়া সাবেক এই প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি, রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সি এম শফি সামী।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে আজ রোববার সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সাবেক প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহ্য অনুসারে রোববার অবকাশকালীন বেঞ্চের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৩০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই// গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ সালে নান্দাইলের চণ্ডিপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ফজলুল হক হলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। তার বাবা তালুকদার রিসাত আহমেদ একজন সমাজসেবী ও এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের কর্মজীবনের সূচনা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। পরবর্তী সময়ে সহকারী জেলা প্রশাসক হওয়ার পর ১৯৬০ সালে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন। আসীন হন বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে।
নব্বইয়ের আন্দোলনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের পতনের পর প্রেসিডেন্টের পদে কে আসবে, নির্বাচন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কে থাকবেন- সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া দলগুলো (তিন জোট) একমত হতে পারছিল না। পরে প্রধান বিচারপতিকে সেই দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়। আবার সুপ্রিম কোর্টে ফেরার শর্ত দিয়ে সাহাবুদ্দীন আহমদ তাতে রাজি হন। পরে সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় সরকার প্রধান হিসেবে তিনি বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বেশকিছু আইন সংশোধন করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন। নির্বাচনের পর আবার প্রধান বিচারপতির পদে ফেরেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। এ জন্য দেশের সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। ওই পদ থেকেই অবসরে যান তিনি। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ২০০১ সালের ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।
সাহাবুদ্দীন আহমদের বাবা তালুকদার রেসাত আহমদ ভূঁইয়া খ্যাতনামা সমাজসেবক ও জনহিতৈষী ব্যক্তি ছিলেন। সাহাবুদ্দীন আহমদ দুই ছেলের সঙ্গে গুলশানের বাসায় থাকতেন। তার দুই মেয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালের ২৩শে জুন যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ২০১৮ সালে মারা যান সাহাবুদ্দীন আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা আহমদ (৮০)।