প্রতি বছর রমজান এলেই বেড়ে যায় পণ্যের দাম। তবে এবার তেমনটা হবে না বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আমদানি বেড়েছে, মজুতও যথেষ্ট। তাই ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার রমজানে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না।
কাস্টমস বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত আট মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোলা আমদানি হয়েছে দুই লাখ ২৮ হাজার ৯২১ টন। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে ছোলা আমদানি হয়েছিল এক লাখ ৩২ হাজার ৯৩৩ টন।
চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মসুর ডাল আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৯২ টন। ২০২১ সালে একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ২ লাখ ৮ হাজার ৮১৬ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে মটর আমদানি হয়েছিল দুই লাখ ৯০ হাজার ৮৯৭ টন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মটর আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭১১ টন।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চার লাখ ৮৮ হাজার ২২১ মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আরও ৯০ হাজার টন অপরিশোধিত চিনিবাহী দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় এসে পৌঁছেছে। সেগুলো থেকে খালাস চলছে। ২০২১ সালে একই সময়ে চিনি আমদানি হয়েছিল দুই লাখ ২৮ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন।
তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে চার দশমিক পাঁচ লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং ছয় দশমিক তিন লাখ টন পাম তেল আমদানি করা হয়েছে। ব্যবসায়ী ও আমদানিকরকরা বলছেন অনেক বেশি পরিমাণে ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ও খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আল মদিনা ট্রেডার্সের মালিক আহসান উল্লাহ জায়েদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্প্রতি শুল্ক প্রত্যাহারের পর খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে সাড়ে ৬ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছিল।
বর্তমানে খাতুনগঞ্জে মনপ্রতি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ হাজার ১০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহের প্রথম দিকে ছিল পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা। শুল্ক সুবিধা যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ সুবিধা থাকবে বলে মনে করেন আহসান উল্লাহ জায়েদী।
তিনি বলেন, ২০ দিনের ব্যবধানে ছোলার দামও কমেছে কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা। এখন ছোলা মান ভেদে ৬০ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোলা আমদানি করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। রমজানে ছোলার অনেক চাহিদা থাকে। যথেষ্ট আমদানি হয়েছে। আশা করছি এ বছর রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়বে না। ছোলা, তেল, ডালসহ রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। খাতুনগঞ্জে পণ্যের দাম কিছুটা কমতির দিকে বলা যায়।
ছোলা-ডাল ব্যবসায়ী ও খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খাতুনগঞ্জে সব পণ্যের দামই নিম্নগামী। এখনো সেভাবে বিক্রি শুরু হয়নি, আশা করছি বাড়বে। খাতুনগঞ্জে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। পণ্যের ঘাটতি নেই। তাই রমজান উপলক্ষে নতুন করে কোনো পণ্যের দামই বাড়বে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে ওই দুই দেশ থেকে আসা পণ্যের ক্ষেত্রে দামে প্রভাব পড়তে পারে।
খাতুনগঞ্জের তৈয়্যবিয়া ট্রেডার্সের মালিক সোলায়মান বাদশা ঢাকা পোস্টকে বলেন, খাতুনগঞ্জে চিনির দাম কিছুটা বেড়েছে। মণপ্রতি চিনি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি বেড়েছে এক টাকা। রমজানকে সামনে রেখে খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে। কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকলে কোনো পণ্যের দামই বাড়বে না।
খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে মটর বিক্রি হতো ৪০ টাকায় প্রতি কেজি। বর্তমানে মটরের দাম কিছুটা বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্টিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য সারাদেশেই এখন আমদানি করা হয়। তাই আমার মনে হয় সারাদেশেই সরকারের উচিত পণ্যের দাম মনিটরিং করা। তাহলেই অযথা পণ্যের দাম বাড়বে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব দুই মাস পরে পড়বে বাজারে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি নাজির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাইকারিতে কিছু পণ্যের দাম কমলেও খুচরা বাজারে দামে তেমন প্রভাব পড়েনি। সরকারের উচিত খুচরা বাজারেও তদারকি অব্যাহত রাখা।
তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য মজুদ আছে। কেউ যেন কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মুনাফা যাতে করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেইসঙ্গে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মনিটরিং করতে হবে।