বাংলাদেশ দারুণ জয়ে সিরিজ শুরু করল। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নিল টাইগাররা। দেশটির মাঠে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম জয়।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৮ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। এর আগে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান করে টাইগাররা। এর জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ উইকেটে ২৭৬ রান করে। ঐতিহাসিক এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৯ ম্যাচ খেলেও কোনো জয় পায়নি টাইগাররা। ২০তম ম্যাচে এসে অবশেষে অধরা জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে লিটন দাস-সাকিব আল হাসান ও ইয়াসির আলির হাফ-সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩১৪ রান করে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান বাংলাদেশের। জবাবে প্রোটিয়াদের ২৭৬ রানে অলআউট করে দেয় বাংলাদেশের বোলাররা।
এই জয়ে বিশ্বকাপ সুপার লিগের টেবিলে ১৬ ম্যাচে অংশ নিয়ে ১১ জয় ও ৫ হারে ১১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই থাকলো বাংলাদেশ। আর ১১ ম্যাচে ৩ জয়, ৬ হার ও ২টি পরিত্যক্ত ম্যাচের কারণে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দশম স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা।
টাইগারদের দেওয়া বিশাল রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে প্রোটিয়ারা। আর তাদের বিপদে ফেলেন পেসার তাসকিন আহমেদ। তিনি দলীয় অষ্টম ওভারের প্রথম ও চতুর্থ বলে উইকেট তুলে নেন। বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার শরিফুল ইসলাম। তিনি ওপেনার জানেমান মালানকে মাত্র ৪ রানে আউট করে দেন। ওই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দলীয় রান ছিল ১৮।
প্রোটিয়া শিবিরে দ্বিতীয় আঘাতটি হানেন তাসকিন দলীয় ৩৬ রানের মাথায়। এ সময় তিনি ওপেনার কাইল ভেরেন্নেকে এলবিডব্লিউ আউট করেন। এরপর এই ৩৬ রানের সময়ই এইডেন মাক্রামকে ক্যাচ আউট করেন। মাক্রামের ক্যাচটি দুর্দান্তভাবে তালুবন্দি করেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
এর পর জুটি গড়েন রাসি ফন ডার ডাসেন ও ডেভিড মিলার। তাদের বিপজ্জনক জুটিটেও ভাঙেন তাসকিন। এ জুটি ভাঙতে একের পর এক বোলার বদলাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল।
তাসকিনের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের ছোড়া বল হাঁটু গেড়ে লেগে ঘুরান ফন ডার ডাসেন। আর ছুটে গিয়েই বলটি তালুবন্দি করেন ইয়াসির। আর এতে ভেঙে যায় ৭০ রানের জুটি। সর্বশেষ ৪০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৫ উইকেটে ১৯৯। এর আগে প্রথম ম্যাচটিতে টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেছেন সাকিব আল হাসান। অন্যদিকে সমান ৫০ রান করে করেছেন ইয়াসির আলী ও লিটন দাস।
ম্যাচটিতে টসে হেরে ব্যাট করতে নামে টাইগাররা। শুরুতেই বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তারা ওপেনিং জুটিতে করেন ৯৫ রান। এরপর চতুর্থ উইকেটের জুটিতে দলের রানের খাতায় ১১৫ রান যোগ করেন সাকিব আল হাসান ও ইয়াসির আলী।
তামিম দলীয় ৯৫ রানের সময় ৬৭ বল খেলে ৪১ রান করে আউট হন। এরপর লিটন দাস হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেই সাজঘরে ফেরেন। তিনি আউট হন দলীয় ১০৫ রানের সময়। পর পর দুটি উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপ আরও বাড়ে যখন দলীয় ১২৪ রানের সময় মুশফিকুর রহিম মাত্র ৯ রান করে আউট হন।
কিন্তু এরপরই দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও ইয়াসির আলী। তারা দুইজন মিলে রানের সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। সাকিব থামেন দলীয় ২৩৯ রানের মাথায়। সাকিব বিদায় নেওয়ার পর ইয়াসিরও দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন। তিনি ২৩৪ রানের সময় আউট হন।
সাকিব ও ইয়াসির আউট হওয়ার আগে বাংলাদেশ বড় সংগ্রহের দিকেই আগাচ্ছিল। কিন্তু তারা দুইজন কম সময়ের মধ্যে আউট হয়ে যাওয়ার পর রানের গতি কিছুটা কমে যায়। কিন্তু লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা শেষ দিকে দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দেন।
শেষ দিকে ব্যাট করতে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ ১৩ বল খেলে ১৯ রান করেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৭ বল খেলে ২৫ রান করেন। তাছাড়া আফিফ ১৩ বলে ১৭ ও তাসকিন ৫ বলে ৭ রান করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মার্কো জেনসন ও কেশভ মহারাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩১৪/৭ (তামিম ৪১, লিটন ৫০, সাকিব ৭৭, মুশফিক ৯, ইয়াসির ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ১৭, মিরাজ ১৯*, তাসকিন ৭*; এনগিডি ১০-১-৭৫-১, রাবাদা ১০-০-৫৭-১, ইয়াসেন ১০-১-৫৭-২, মহারাজ ১০-০-৫৬-২, ফেলুকওয়ায়ো ১০-১-৬৩-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৮.৫ ওভারে ২৭৬ (ভেরেইনা ২১, মালান ৪, বাভুমা ৩১, মারক্রাম ০, ফন ডার ডাসেন ৮৬, মিলার ৭৯, ফেলুকওয়ায়ো ২, ইয়ানসেন ২, রাবাদা ১, মহারাজ ২৩, এনগিডি ১৫*; সাকিব ১০-০-৫৪-০, শরিফুল ৮-০-৪৭-২, তাসকিন ১০-১-৩৬-৩, মুস্তাফিজ ১০-০-৫০-০, মিরাজ ৯-০-৬১-৪, মাহমুদউল্লাহ ১.৫-০-২৪-১)