মানিকগঞ্জ থেকে জোরপূর্বক প্রাইভেটকারে তুলে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিয়ে সাবেক স্বামীসহ চার বন্ধু মিলে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার রাতে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ওই গৃহবধূর সাবেক স্বামী মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার টুটিয়াম গ্রামের সৈকত আলীর ছেলে আল-মামুন রশিদকে (৩৮)। অন্যরা হলেন- বরিশাল বিমানবন্দর থানার গণপাড়া গ্রামের আব্দুল হাসেম মাঝির ছেলে আব্দুর রব মুন্না (৪৫), হাসু (৩৪) ও রিয়াজ (৩৫)।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার ওই গৃহবধূর সঙ্গে ২০১৮ সালে দৌলতপুর উপজেলার টুটিয়াম গ্রামের সৈকত আলীর ছেলে আল-মামুন রশিদের দ্বিতীয় বিয়ে হয়। এর আগে ২০১১ সালে এক সেনা সদস্যের সঙ্গে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় ওই গৃহবধূর বিয়ে হয়। ওই ঘরে তার তিনটি সন্তান রয়েছে। তবে ওই সেনা সদস্য অন্যত্র বিয়ে করায় তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
এরপর আল-মামুনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই গৃহবধূকে মারপিট করতেন মামুন। উপায় না পেয়ে গত বছর গৃহবধূ মানিকগঞ্জের নারী ও শিশু আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর গত বছরের ১৫ নভেম্বর গৃহবধূকে তালাক দেন মামুন। এরপর থেকে বিভিন্নভাবে তাকে হুমকিও দিতে থাকেন।
শনিবার (১২ মার্চ) বিকেলে গৃহবধূ বাবার বাড়ি থেকে মানিকগঞ্জের ঘিওর থানায় ফুপুর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘিওর পাঁচ রাস্তার কাছে ফাঁকা জায়গায় পৌঁছালে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার থেকে সাবেক স্বামীসহ চার বন্ধু জোর করে মুখ চেপে তাকে তুলে নেয়। এ সময় গৃহবধূকে জোরপূর্বক কোমল পানীয়’র সঙ্গে নেশা জাতীয় কিছু পান করানো হয়। এতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এরপর চলন্ত প্রাইভেটকারে পালাক্রমে আল-মামুন, আব্দুর রব, মুন্না ও হাসু তাকে ধর্ষণ করে। গাড়িটি পাটুরিয়া ঘাট হয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে পৌঁছায়। সেখানে একটি পরিত্যক্ত ফাঁকা ভিটায় হাত-পা বেঁধে রেখে পালিয়ে যায়। এ সময় তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। পরে রোববার রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় চারজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন গৃহবধূ।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার জানান, খবর পেয়ে শনিবার মধ্যরাতে গৃহবধূকে উদ্ধার করি। পরের দিন গৃহবধূ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পরে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পাঠায়। চিকিৎসকরা ধর্ষণ সংক্রান্ত কোনো বিষয় জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। আমরা রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। সোমবার বিকেলে গৃহবধূকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।